গুটিবাজ, ফাপরবাজ নাকি চাপাবাজ – আপনার বস কেমন?
আপনি কি ভেবেছেন রবীন্দ্রনাথের কথা মতো রমণীর মন পাওয়াই কঠিন? জ্বি না জনাব, রমণীর মনের চেয়েও কঠিন বসের মন। চলেন দেখি আজকাল বসের বাজারে দরদাম কেমন:
১. অযথা বকাবকি/ঝাড়িপট্টি বস: ফজলু বেচারা বসের ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে থাকে, না জানি কোন সময় ধমক খেতে হয়। কার্টুনিস্ট হবার শখ নিয়ে ফজলু একদিন বসের একটা কার্টুন এঁকেই ফেললো। সেই খবর চলে গেল বসের কানে। বস হুঙ্কার দিলেন, “ফজলু, কোথায় ফাজিল ফজলু?” কলিজা হাতে নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ফজলু এসে বসের সামনে দাঁড়াতেই বসের ঝাড়ি, “চেহারা প্যাচার মতো বানিয়ে ঘুরছো কেন? কার্টুন তো ভালোই এঁকেছো, কাজের কাজ তো কিছুই পারোনা।” আপনার বস যদি ফজলুর বসের মতো অযথা বোকা দেয় তাহলে আপনার কপালে একজন অত্যন্ত বিরক্তিকর ঝাড়িপট্টি বস জুটেছে। এই অবস্থায় আপনাকে সাথে হাজমোলা বড়ি, এন্টাসিড অথবা ইনো রাখতে হবে - তাতে আপনার ঝাড়ি হজমে সহায়তা হবে।
২. যম-আতঙ্ক বস: ফজলুর সহকর্মী মজনু - তার ঘটনা আরো সিরিয়াস। মজনু মিয়া ভোজনরসিক হবার কারণে তার একটা ভুঁড়ি হয়েছে। এই ভুঁড়ির জের ধরে মজনুর বউ তাকে রাত দিন কথা শোনায়। উপায় না পেয়ে, মজনু এখন অফিসেই ভাত খায়। একদিন মজনুর বস দেখলো, মজনু অনেক্ষণ ধরে ডেস্কে নেই। তিনি খুঁজতে খুঁজতে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখেন মজনু ভাত খাচ্ছে। কাজ ফাঁকি দিয়ে ভাত খাবার অপরাধে তিনি মজনুকে যারপর নাই ঝাড়ি দিলেন এবং শোকজ নোটিস দেবার ভয় দেখালেন। অবস্থা এখন মজনু মিয়ার এতই খারাপ যে, বস আশেপাশে থাকলে সে আতংকিত অনুভব করে। বেচারা ভয়ে ক্যান্টিন যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আপনার যদি “যেকোনো সময় চাকরি চলে যাবার আতঙ্ক থাকে তাহলে আপনার বস যম-আতঙ্ক বস”। এই ধরনের বসের ক্ষেত্রে আপনাকে টিউশানির উপরে নির্ভরশীল হতে হবে - চাকরি গেলেও যেন বিকল্প ব্যবস্থা থাকে।
৩. মাইনকার চিপা বস: মজনুর ভাই ঝন্টুর সকাল শুরু হয় বসের ফোন পেয়ে। চোখ ডলতে ডলতে বেচারা ঘুম থেকে উঠেই দেখে গোটা বিশেক মিসড কল, আর গোটা দশেক মেসেজ - শুধু বস না, সাথে তার জুনিয়র কলিগদের নানান রকম তদবির। একদিকে পান থেকে চুন খসলেই ঝন্টুকে তার বস কথা শোনায়, অন্যদিকে সে বেচারা দলপতি হবার কারণে সারাক্ষণ তার কলিগদের তদবির - আর বাসায় বউ এর যন্ত্রণা তো আছেই। মানে এক কথায় ঝন্টু মিয়া ‘ফাইস্যা গেছে মাইনকার চিপায়’। ঝন্টু বেচারা শুধুই নামেই বস, তবে আসল ঘটনা, বেচারা চারিদিক থেকে চাপ খেয়ে এমন অবস্থায় পড়েছে যে, এখন তার অবস্থা একটা পাংচার হওয়া চাকার মতো। পাঠক, আপনার অবস্থা কি ঝন্টুর মতো?
৪. অলস বস: ঝন্টুর পাশের বাসার বল্টু আবার এদিক থেকে ভালই আছে - বল্টুর অফিসে গেলে একটা ঢিলাঢালা ভাব দেখা যায়। বল্টুর বস একজন অলস এবং ’ঝিম-মারা’ ব্যক্তি। বল্টু সাহেব দেরি করেই অফিসে যায়, চা খায় - তারপর আস্তে-ধীরে কাজ শুরু করে। তার বস গপ্পো করতে ভালোবাসে। সে দিনের বেশির ভাগ সময় গপ্পো পিটিয়েই চালিয়ে দেয়। তবে বিপদে পরতে হয় যখন বড় বস হাজির হন – কাজের হিসাব যখন চান তখন আমাদের বল্টু সাহেবের গপ্পিস বস মুখ কাচুমাচু করে তাকিয়ে থাকে আর ঝাড়িটা বল্টুকেই খেতে হয়। আপনার বস যদি হয় এই ধরনের, তাইলে ভাই - আপনার চাকরি ছাড়ার সময় হয়েছে। নতুন চাকরি খুজেঁন।
৫. গুটিবাজ বস: সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা বল্টুর ভাই মন্টুর। বেচারা পরেছে এক অফিস-রাজনীতির চিপায়। সে ভেবেছিলো, নীরবে কাজ করে যাবে - সে কারো সাতেও থাকবে না, পাঁচেও থাকবে না, তবে এখন দেখা যাচ্ছে, ঘটনা অন্য - সব জায়গায় শুধু মন্টুকে নিয়ে ফিসফাস, তাকে নিয়ে নানান রকমের রসালো আলাপ। মন্টুর বস অফিসটাকে রীতিমতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বানিয়ে ফেলেছেন - সেখানে মন্টু বেচারা বিরোধীদলের একজন। এই ধরনের বস আপনার হলে, আপনি ভালো কাজ করলেও বস ভ্রু কুঁচকে তাকাবে। এঁদের ক্ষেত্রে আপনাকে রবীন্দ্রনাথের ‘একলা চলো রে’ পন্থা নিতে হবে। মানে, নিজের কাজ করেন - চুপ কইরা থাকেন।
সব বস যে খারাপ তা কিন্তু না। বসদের মধ্যে কেউ আছেন বন্ধু বস - যারা বস কম এবং বন্ধু বেশি। কারো কারো কপালে পরে মমতাময়ী বস - আপনার জন্মদিন বা পছন্দের খাবার এরা মনে রাখেন এবং যথাসময়ে আপনাকে ভালোবাসায় ভাসিয়ে দেয়। কারো কপালে আছে ড্রামাটিক বস - এদের জীবনে নাটকীয় ঘটনার কোনো শেষ নেই, এবং বলাই বহুল্য সেই ঘটনাগুলো বেশ মজার - (আমার কপালে ড্রামাটিক বস পড়েছে)। পাঠক আপনার বস কেমন?
Comments