গ্ল্যাডিওলাসে সচ্ছলতা পেয়েছেন সাভারের ফুল চাষিরা
বলা হয় জুঁই ও গন্ধরাজ ফুলের সুবাসে রাতের ঘুম ভালো হয়। তবে গ্ল্যাডিওলাসে গন্ধ না থাকলেও মনকাড়া সৌন্দর্যের জন্য তার সুখ্যাতি। তবে সাভারের ৩২ বছরের নুরে আলম গ্ল্যাডিওলাসের সঙ্গে পেয়েছেন রাতের নিশ্চিন্ত ঘুমের চাবিকাঠি, আর সেটা হলো আর্থিক সচ্ছলতা।
ফুল চাষে সফল আলম বলেন, “দারিদ্র্যের কারণে রাতে ঘুমাতে পারতাম না। কিন্তু এখন আমি আর্থিকভাবে সচ্ছল। সেই সাথে রাতে ঘুমের সমস্যাও আর নেই।”
২০১২ সালের কথা। সে বছর গ্ল্যাডিওলাস চাষের জন্য এক বিঘা জমি ইজারা নেন আলম। ওই এক বিঘা জমির ফুল থেকে সে বছর ৫০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। আর এ বছর ইজারা নেওয়া আট বিঘা জমির ফুল থেকে ছয় লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
ফুল চাষের নানা আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা হয় আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, “ফুল চাষের জন্য প্রতি বিঘা জমিতে কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়। সেই সঙ্গে ২৫ হাজারের মতো বীজ লাগে। এর জন্য খরচ পড়বে ৫০ হাজার টাকা। আমি দেখেছি অন্যান্য ফুল চাষের চেয়ে গ্ল্যাডিওলাস চাষে বেশি লাভ হয়।”
একই জমিতে নানা রঙের গ্ল্যাডিওলাস চাষ করা যায়। এটি সাধারণত সাদা, লাল, হলুদ, লাল, গোলাপি, বেগুনী, গোলাপি লাল ও নীল রঙের হয়ে থাকে। এই ফুলের নির্দিষ্ট কোন ঋতু নেই। যে কোন ঋতুতে ৭০ দিনের মধ্যে জমি থেকে ফুল তোলা যায়।
ফুল বিক্রির টাকা থেকে একটি ট্রাক কিনেছেন আলম। ট্রাকটিতে করে তিনি বাজারে ফুল পরিবহন করেন। গ্ল্যাডিওলাস চাষের পাশাপাশি তিনি লিজ নেওয়া তিন বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ শুরু করেছেন। এছাড়াও আরও ১০ বিঘা জমিতে পেঁপে, কুমড়া, ফুলকপি ও পালং শাক চাষ করছেন। চাষে বৈচিত্র্য আনায় বছরব্যাপী আয়ের নিশ্চয় এসেছে তার।
আলমের এই সাফল্য প্রতিবেশিদেরকেও উদ্বুদ্ধ করেছে। তার দেখাদেখি অনেকেই ফুল চাষে নেমেছেন। প্রতিবেশী নিতাই চন্দ্র এমন একজন। তিনি বলেন, “আমরা প্রায়ই আলমের গ্ল্যাডিওলাসের জমিতে যাই। সেখানে আমরা যেমন সৌন্দর্য উপভোগ করি তেমনি চাষের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়েও জানতে পারি।”
এলাকার অপর গোলাপ চাষি লোকমান হোসেন জানান, “গ্ল্যাডিওলাস চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। লাভের বিবেচনায় গোলাপ ছেড়ে অনেকেই গ্ল্যাডিওলাসের দিকে ঝুঁকছেন।”
সাভার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, সাভারের এক হাজারের বেশি কৃষক সাড়ে তিন’শ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করছেন। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো মফিদুল ইসলাম বলেন, গ্ল্যাডিওলাস চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় নতুন চাষিদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
Comments