ঝুঁকিতে হার্টের রোগীরা

Stent

অতি প্রয়োজনীয় স্টেন্ট এর পরিবেশকদের অঘোষিত ধর্মঘটের ফলে ঝুঁকিতে পড়েছেন হার্টের রোগীরা। রোগীদের এমনভাবে জিম্মি করায় রোগী ও তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়েছেন চিকিৎসকরাও।

হার্টের ব্লক সরাতে এই মেটাল ডিভাইসটি খুবই প্রয়োজন। উচ্চমূল্য এবং তা সংরক্ষণে অপারগতার কারণে হাসপাতালগুলো, বিশেষ করে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্টেন্ট রাখা হয় না। রোগীর চাহিদা অনুযায়ী এগুলো যোগান দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিন থেকে ভর্তি রয়েছেন মাগুরা থেকে আসা ৬৫ বছরের ফারুকুল ইসলাম। গতকাল তাঁর হার্টে স্টেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

ফারুকুলের ছেলে সাব্বির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বাবাকে সকালে অপারেশনের জন্যে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আমারা আশা করেছিলাম সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে। কিন্তু হঠাৎ শুনতে পেলাম ধর্মঘট চলছে। তাই ডাক্তাররা স্টেন্ট বসাতে পারেননি।”

একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র রোগীদের জিম্মি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জীবন নিয়ে এভাবে খেলা করার অধিকার কারো নেই। এমন ঘটনায় আমি ভীষণ হতাশ।”

অতি শীঘ্রই সরকারকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি শিউলি বেগমের এক আত্মীয়দের মুখেও একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেলো।

গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এএসএম মুস্তাফা জামানের ১০জন রোগীর হার্টে স্টেন্ট বসানোর কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “আমি জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি স্টেন্ট দেওয়ার জন্যে এর পরিবেশকদের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা তা শোনেননি।”

একই অবস্থা দেখা যায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটেও। হৃদরোগের চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন ১০০ জন রোগীর স্টেন্টের প্রয়োজন হয়।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান গত ১৮ এপ্রিল সাংবাদিকদের বলেন, চারটি স্টেন্ট পরিবেশক কোম্পানি বলেছে তারা একধরনের স্টেন্ট ২৫,০০০ টাকা এবং অন্যধরনের স্টেন্ট ৫০,০০০ টাকায় বিক্রি করবে।

চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে, সরকারি হাসপাতালে একটি স্টেন্টের দাম পড়ে ৮০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। বেসরকারি হাসপাতালে এই খরচ পড়ে দ্বিগুণের মতো।

কিন্তু, কিছু গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে যে স্টেন্টের সর্বনিম্ন দাম ২৫,০০০ এবং সর্বোচ্চ দাম ৫০,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, এর ফলে স্টেন্ট পরিবেশকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোরটারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গাজী একে শাহীন স্টেন্ট পরিবেশকদের অঘোষিত ধর্মঘটের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “স্টেন্টের দাম নিয়ে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল বৈঠক হয়েছে। সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। আমরা এখন স্টেন্ট পরিবেশন করছি।”

গত ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকার স্টেন্টের দাম সর্বোচ্চ ৩০ হাজার রুপি নির্ধারণ করে দিয়েছে। ফলে, রোগীরা হৃদরোগের চিকিৎসার জন্যে ভারতমুখী হয়ে যাবেন বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন।

বাংলাদেশে ৪৭ ধরনের নিবন্ধিত স্টেন্ট পাওয়া যায়। একুশটি কোম্পানি সেগুলো পরিবেশন করে থাকে। স্টেন্টের দাম নির্ধারণের জন্যে সরকার সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago