পৃথক রাজ্যের দাবিতে অনড় মোর্চা নেতারা

দাজিলিংয়ে শান্তি ফেরেনি

Darjeeling
শুক্রবার (৯ জুন) পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য জেলা দার্জিলিংয়ে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ছবি: স্টার

পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল দার্জিলিং জেলায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটল শুক্রবার। পাহাড়ে এদিন গোর্খা মুক্তিমোর্চার ডাকে ১২ ঘণ্টার হরতাল পালিত হয়।

সকাল থেকে তেমন উত্তেজনা না দেখা গেলেও দুপুরের পর থেকে নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠে শৈলশহর। নতুন নির্মিত একটি আইটিআই ভবনে মোর্চার সদস্য বলে পরিচয় দেওয়া একদল যুবক ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। যদিও সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শুক্রবার দিনভর হরতালের মারাত্মক প্রভাব দেখা গিয়েছে সেখানে। পার্বত্য এলাকার প্রায় নব্বই শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল। সরকারি বাস ছাড়া বেসরকারি বাস চলেনি। সরকারি অফিসের উপস্থিতিও ছিল কম।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে পাহাড়ে সেনা বাহিনী টহল দিতে শুরু করে। শুক্রবারও শহরটি ছিল তাদেরই দখলে। সেনাবাহিনী ছাড়াও রাজ্যের পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরাও কড়া নজরদারি চালিয়েছে দার্জিলিং, কালিংপঙ, কার্শিয়াঙ এলাকাগুলোতে।

Mamta Banarjee
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। ছবি: স্টার

শুক্রবার সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে পাহাড়ে আসা পর্যটকদের নিরাপদে সমতলে ফেরানোর ব্যবস্থার তদারকি করেন রাজ্যটির প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ম্যালে তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকও করেন। পাহাড়ে আটকে পড়া পর্যটকদের বিনামূল্যে সমতলে পৌঁছে দেওয়ার কাজ ছাড়াও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে আহত হওয়া পর্যটক-পুলিশ-সরকারি বা বেসরকারি নাগরিকদের চিকিৎসার জন্যও অনুদানের ঘোষণা করেন মমতা।

মার্চ থেকে অক্টোবর – এই আট মাস মূলত দার্জিলিংয়ের পর্যটন মৌসুম। ঠিক এই সময়ে পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক সংগঠন গোর্খা মুক্তিমোর্চা আন্দোলনে নামায় পাহাড়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক মারাত্মক সংকটে পড়েছেন। চিন্তায় পড়েছেন পাহাড়ের গাড়ি ব্যবসায়ীরাও।

বৃহস্পতিবার দিনভর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরই পাহাড় থেকে সমতলে ফিরতে শুরু করেন পর্যটকরা। শুক্রবারও বিকাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার পর্যটক সমতল অঞ্চল শিলিগুড়িতে নেমে এসেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এখনও কমপক্ষে ৩০ হাজার পর্যটক আছেন পার্বত্য অঞ্চলে।

শুক্রবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, যারা পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বাংলা ভাষাকে ঐচ্ছিক ভাষা হিসেবে সরকার এখানে ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেটা উল্টো প্রচার করা হচ্ছে। আসলে রাজনৈতিকভাবে কোনও ইস্যু খুঁজে না পেয়ে এমন জঙ্গি আন্দোলনের পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ে শান্তি না ফেরা পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলেই তিনি থাকবেন বলেও জানান।

মমতা বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিয়েছি। কেউ এখানে থাকবে কেউ ওদিকে (কলকাতায়) থাকবে।

এদিকে, পাহাড়ে আন্দোলনরত মোর্চার নেতা বিমল গুড়ং জানিয়েছেন, গোর্খাল্যান্ড তথা আলাদা রাজ্য হিসাবে দার্জিলিংকে স্বীকৃতি দিতেই হবে। এখানে বাংলা ভাষা নয়, চলে স্থানীয় নেপালি ভাষা। পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের যে পথ তারা বেছে নিয়েছেন, সেই পথেই তারা হাঁটবেন বলে শুক্রবার বিকালে সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্ট করেছেন ওই শীর্ষ গোর্খা নেতা।

Comments

The Daily Star  | English

Rising gas prices threaten our investment prospects

The previous government not only turned the country into a net importer of energy, but also initiated a process to make it an import-dependent.

6h ago