তুফান পরিবারের কুকর্মের ইতিহাস

দায়মুক্তির আর্শীবাদে হত্যা মামলার আসামি

তুফান সরকার, তার তিন ভাই এবং তাদের আরও নয়জন সহযোগী মিলে ইমরানকে বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর মধ্যপাড়ায় নিজের বাসায় প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর।
Tufan Sarkar
২০১১ সালে বগুড়া শ্রমিক লীগের বর্তমানে বরখাস্ত নেতা তুফান সরকার (প্রথম সারিতে বামে) ১,৭০০ বোতল ফেন্সিডিল এবং ৫,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ধরা পড়ে। ছবি: র‌্যাব

তুফান সরকার, তার তিন ভাই এবং তাদের আরও নয়জন সহযোগী মিলে ইমরানকে বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর মধ্যপাড়ায় নিজের বাসায় প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর।

তারা এই বিএনপি সমর্থককে প্রথমে গুলি ও পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে।

এই নৃশংসতা সেই এলাকার অনেকেই দেখেছিলেন। বড় ভাই হিলু ইমরানকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তার দুই হাতের আঙ্গুল কেটে দেয়।

কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার প্রাথমিক তথ্যে (এফআইআর) এসব কথা বলা রয়েছে। ঘটনার আট মাস পর দেওয়া অভিযোগপত্রেও এ কথাগুলো রয়েছে।

উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক মিয়া অভিযোগপত্রে ঘটনাটিকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছেন। এছাড়াও, তিনি তুফান, তার তিন ভাই – সোহাগ সরকার, ওমর সরকার এবং ঝুমুর সরকার – এবং তাদের নয় সহযোগীকে হত্যাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু, এ ঘটনায় তুফান বা কেউই গ্রেফতার হোননি। পুলিশ বলেছে তারা বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েও অভিযুক্তদের খুঁজে পায়নি। অথচ, অভিযুক্তদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।

পুলিশের তদন্তের মধ্যে তুফান এবং অন্যান্য অভিযুক্তরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। এ কথাও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা টাকার বিনিময়ে তুফানকে এই জামিন পেতে সহযোগিতা করেন।

এদিকে, গত ১৭ জুলাই, তুফান একজন কলেজছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিজের বাসায় এনে ধর্ষণ করে বলে খবরে প্রকাশ। প্রতিহিংসার ভয়ে মেয়েটি তৎক্ষণাৎ তা প্রকাশ করেননি।

২৮ জুলাই, তুফানের স্ত্রী আশা বিষয়টি জানতে পেরে কয়েকজন সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে সেই মেয়ে ও তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে চার ঘণ্টা নির্যাতন করে। শেষে তাদের মাথা কামিয়ে দেয়।

একজন মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ হিসেবে তুফানকে দুবার গ্রেফতার করা হয়। সেসময় তার সঙ্গে নিষিদ্ধ ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ফেন্সিডিলের বোতল পাওয়া যায়। এগুলো ঘটেছিলো ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে। এ দুটি ক্ষেত্রেই তুফান জামিন পেয়ে আবারো অবৈধ কাজ শুরু করে। সে হত্যা-চেষ্টা মামলাতেও একজন অভিযুক্ত।

১ আগস্ট বগুড়া শহরের একজন আইনজীবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে এবং যথাযথ তদন্তের পর তার শাস্তি নিশ্চিত করবে। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয়, তাকে জামিন দেওয়া হয় এবং ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হয়।”

ইমরানের মা মিনু বেগম হত্যা মামলাটি দায়ের করেন এবং কিভাবে তার ছেলেকে হত্যা করা হয় তার বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, “এলাকায় মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় অপরাধীরা আমার ছেলেকে হুমকি দিয়ে আসছিলো।”

এমন অবস্থায়, ইমরানের পরিবার কিছু দিনের জন্যে সেই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তারা ফিরে এলে অপরাধীরা ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে একটি মীমাংসায় আসতে চায়। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেই প্রস্তাবে রাজি হয় তারা।

সেই আইনজীবী যোগ করেন, “এমনভাবে ভাষ্য দিতে তাদেরকে রাজি করানো হয়েছিলো যাতে তুফান ও অন্যান্য অপরাধীদের অপরাধ ধরা না পড়ে।”

ইমরানের ভাই মামুন স্বীকার করেন যে তাদেরকে মীমাংসা করতে বাধ্য করা হয়েছিলো। “তারা আমাদেরকে বলেছিলো আদালতে গিয়ে বলবো যে আমরা হত্যাকারীদের দেখিনি।”

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “হামলার ভয়ে আমরা সবসময়ই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি।”

এদিকে, পুলিশ গতকাল (২ আগস্ট) গ্রেফতারকৃত আটজনকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যামসুন্দর রায়ের কাছে হাজির করে।

২৯ জুলাই ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা বগুড়া সদর থানায় তুফান, আশা, রুমকি, রুমি, রুনু, শিমুল, আতিক, রূপম, জিতু, দিপু এবং অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের জন্যে দুটি মামলা দায়ের করেন।

এদের মধ্যে আতিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে বলে কিভাবে মেয়েটিকে তার বাড়ি থেকে তুলে এনে তুফানের বাসায় নিয়ে আসা হয় এবং পরে ধর্ষণ করা হয়।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago