ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় ৪ সন্তানের মাকে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের গণধর্ষণ’

rape logo
স্টার অনলাইন গ্রাফিকস

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গতকাল (৩১ ডিসেম্বর) চার সন্তানের এক জননীকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১০/১২ কর্মী মিলে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে।

গুরুতর আহত অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৫ বছরের ওই নারীর অভিযোগ, নির্বাচনে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

চর জুবিলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমীনের নেতৃত্বে এই পাশবিক কাজ করা হয়েছে বলে জানান ওই নারী। তিনি বলেন, “তারা আমাকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেছিলো, কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে ধানের শীষে ভোট দিয়েছি।”

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে রুহুল আমীন জানান, ওই নারী তার আত্মীয় এবং তাদের মধ্যে কোনো শত্রুতা নেই। তিনি আরও বলেন, “ভোটকেন্দ্রে কেবল একবার আমি তার (নারী) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”

রুহুল আমীনের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে, তিনি সুবর্ণচর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান।

ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী নারী জানান, গতকাল মধ্যরাতের পর ১০ থেকে ১২ জন লোক হাতে লাঠিসোটা নিয়ে বেড়া কেটে তার বাড়িতে ঢুকে। তারপর তারা তার সিএনজি-চালিত অটোরিকশার ড্রাইভার স্বামী ও চার সন্তানকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

আরও পড়ুনঃ

নোয়াখালীতে ‘গণধর্ষণ’: ‘নির্দেশদাতাকে’ বাদ দিয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা​

“এরপর তারা আমাকে বাইরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে,” তীব্র ব্যথায় গোঙাতে গোঙাতে বলেন ওই নারী।

তিনি আরও বলেছেন যে, এ বিষয়ে মুখ খুললে তার স্বামী ও সন্তানদের মেরে ফেলা হবে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ধর্ষণকারীরা।

ওই নারীর স্বামী (যিনি নিজেও আহত) জানান, আনুমানিক রাত চারটার দিকে তার স্ত্রীকে মারাত্মক আহত করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রাখে এবং ৪০ হাজার টাকা, সোনার গয়না ও অন্যান্য দামী জিনিসপত্র নিয়ে ধর্ষণকারীরা পালিয়ে যায়।

এরপর, ওই নারীর স্বামী ও সন্তানের কান্নাকাটি শুনে প্রতিবেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, “প্রথমে গ্রামের একজন চিকিৎসককে ডাকা হয়। কিন্তু, ওই নারীর শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকায় দুপুরে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, তারা ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন। ভুক্তভোগীর শরীরে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

ওই নারীর স্বামী জানান, তার স্ত্রী গত রবিবার সকাল ১১টায় চর জুবিলী প্রাথমিকে বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। সেখানে তিনি সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে বুথে যেতে চান। ওই সময় আওয়ামী লীগের কর্মী রুহুল আমীন তাকে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেন। কিন্তু, তাকে (রুহুল আমীন) যখন বলা হয় যে ধানের শীষে ভোট দেওয়া হয়েছে, তখন তিনি ব্যালট পেপারটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, এরমধ্যেই তার স্ত্রী ব্যালটটি বাক্সে ঢুকিয়ে দেন। এতেই রুহুল ক্ষেপে যান এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধর্ষণের অভিযোগটি নিশ্চিত করেন, কিন্তু এটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ঘটনা নয় বলে দাবি করেন। তবে, এ ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

চর জব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় একটি মামলা করেছেন।

আরও পড়ুনঃ নোয়াখালীতে গণধর্ষণ মামলায় আরও ২ আসামি গ্রেপ্তার

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

16h ago