ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’: চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত
mora
ঘূর্ণিঝড় “মোরা”-র হাত থেকে বাঁচার জন্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অধিবাসীরা নিরাপদস্থানে সরে যাচ্ছেন। ছবি: অরূপকান্তি দাশ

বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় “মোরা”। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এদিকে, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ আট নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে এটি আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Track

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার উপকূলবাসীদের নিরাপদস্থান অথবা নিকটবর্তী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

আমাদের চট্টগ্রাম সংবাদদাতা জানান যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আজ এক বৈঠকে জেলা প্রশাসন থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, “জেলার ৪৭৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে চার লাখ ৪৫ হাজার মানুষের আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও, প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারি অফিস ও স্কুলগুলোতে আরও অনেকে আশ্রয় নিতে পারবেন।”

তিনি আরও বলেন যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।

আমাদের সংবাদদাতা জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে লোকজনদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় “মোরা”-র গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্যে জেলার প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফোন নম্বর: ৬১১৫৪৫।

তিনি আরও জানান, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা থেকে অধিবাসীদের নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সেসব এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, “চট্টগ্রাম জেলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।”

প্রতিটি উপজেলায় ২৫ জনের একটি করে চিকিৎসক দল গঠন করা হয়েছে এবং সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে আহত ব্যক্তিদের ৬৩৪৮৪৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় করপোরেশনের পক্ষ থেকে পৃথক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

এছাড়াও, করপোরেশনের বিভিন্ন অফিস ও স্কুল ভবনগুলো লোকজনের আশ্রয়ের জন্যে খোলা রাখা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা তাঁদের নিজ নিজ এলাকার কন্ট্রোল রুম তদারকি করবেন। সেগুলোর ফোন নম্বর: ৬৩০৭৩৯ এবং ৬৩৩৬৪৯।

মঙ্গলবার সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে “মোরা”

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় “মোরা” আরও সামান্য উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল।

এটি আজ (২৯ মে) সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল।

আরও ঘনীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে এটি আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় “মোরা” এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় “মোরা”-র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় “মোরা” অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ সহ ঘণ্টায় ৮৯-১১৭ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

লঞ্চ চলাচল বন্ধ

আজ দুপুরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লুটিএ) যুগ্ম পরিচালক জয়নুল আবেদীন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঘূর্ণিঝড় “মোরা”-র কারণে সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

 

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

10m ago