নারায়ণগঞ্জের ‘নাইটিংগেল’ ইরানি বাড়ৈ

ইরানি বাড়ৈর সমস্যাটা ‘সাধারণ জ্বর’ থেকেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু এটা যে জ্বরের চেয়েও বেশি কিছু তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি কেউ। আর ভাববেই বা কিভাবে, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে আসা ওই জ্বরের কারণ যে আজ ২০ বছর পরও কোন ডাক্তার খুঁজে বের করতে পারেনি।
কর্মস্থলের সামনে ইরানি বাড়ৈ। ছবি: স্টার

ইরানি বাড়ৈর সমস্যাটা ‘সাধারণ জ্বর’ থেকেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু এটা যে জ্বরের চেয়েও বেশি কিছু তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি কেউ। আর ভাববেই বা কিভাবে, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে আসা ওই জ্বরের কারণ যে আজ ২০ বছর পরও কোন ডাক্তার খুঁজে বের করতে পারেনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়েও গিয়েছেন। কিন্তু কোন ফল হয়নি। তবে এই রহস্যময় রোগ শুধু জ্বরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তার দুই হাত ও দুই পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

হুইল চেয়ারই চলাফেরার একমাত্র ভরসা হওয়ায় ভেবেছিলেন নার্সিং পেশার ইতি টানতে হবে। কিন্তু চিকিৎসা করে হাতে শক্তি ফিরে পেয়েছেন। তবে শুধু হাতের জোরে নয় এর সাথে মনের জোর মিলিয়ে হুইল চেয়ারে বসেই সেবা ধর্ম পালন করে চলেছেন ইরানি বাড়ৈ।

নার্সিংয়ে অনেক দিনের অভিজ্ঞতা ইরানির। ১৯৯৬ সালে অসুস্থ হওয়ার বছর দশেক আগেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে নার্সিংয়ের ওপর ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। এর পর মাদারীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে টানা কাজ করেছেন।

কিন্তু প্যারালাইসিসের বাধা পেরিয়ে কর্মজীবনে ফেরা সহজ কথা নয়। অসুস্থ হওয়ার পর সাভারের সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি)-এ এক বছরের আরেকটি ডিপ্লোমা করেছেন। এর পরই কর্মজীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

কষ্টের দিনগুলো ইরানির জীবনে এখন অতীত। এখন ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ডাইরিয়া ওয়ার্ডে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে চাকরি করছেন তিনি।

হাসপাতালে কাজ সম্পর্কে ইরানি বলেন, “হাসপাতালে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। আগের মতই রোগীদের বিছানার পাশে গিয়ে কথা বলি। তারাও আমার কথা শোনেন। সহকর্মীরা আমাকে কাজে সহায়তা করেন। হুইল চেয়ারে থাকায় ছোট খাটো কোন কাজ করতে না পারলে তারাই সেগুলো করে দেন।”

ইরানির কাজে তার সহকর্মীরাও সন্তুষ্ট। একই ওয়ার্ডের আরেকজন সিনিয়র নার্স মাহমুদা খানম বলেন, “ইরানি খুবই দক্ষ নার্স। হাঁটতে না পারলেও অন্য নার্সদের মতই সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার সেবায় অনেক মুমূর্ষু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন।”

ইরানির সেবা নিচ্ছেন এমন একজন রোগী সুমাইয়া জাহানের স্বামী আবুল হাসানের মুখেও প্রশংসার সুর। তিনি বলেন, “তিনি খুবই চমৎকার একজন নার্স। যখনই দরকার পড়ে রোগীরা তখনই তাকে কাছে পায়।”

ইরানির মানসিক শক্তিতে মুগ্ধ নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন আহসানুল হক। তিই বলেন, “তার ব্যবহার ও সেবায় আমাদের রোগীরা সন্তুষ্ট। কাজের ব্যাপারে তিনি খুবই দক্ষ।”

বাড়ির কাজ নিয়েও বিশেষ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না ইরানিকে। তার ভাষায়, “আমার স্বামী ও দুই মেয়ে ঘরের কাজে সহায়তা করে। হুইল চেয়ার থেকে বিছানায় যেতে ও বিছানা থেকে নামতে তারাই সাহায্য করে। আর আমার হাত সচল থাকায় ঘরের বেশিরভাগ কাজই আমি সানন্দে করতে পারি।”

ইরানির বড় মেয়ে ইস্টার শিকদারও নার্সিংকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে মা তার মূল প্রেরণা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ইস্টার। আর ছোট বোন মিতু শিকদার বিবিএ পড়ছে।

ইরানির স্বামী এক সময় এনজিও প্রোজেক্টে কাজ করলেও এখন আর তেমন একটা আয় রোজগার নেই। তাই মেয়ের পড়ালেখা থেকে শুরু করে পরিবারের খরচ সবই আসছে ইরানির আয় থেকে।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago