শীর্ষ খবর

নীলফামারীতে কুদ্দুসের কফি চাষ

বাংলাদেশে উন্নত মানের চা উৎপাদনের ইতিহাস অনেক পুরনো। কিন্তু উষ্ণ পানীয়ের মধ্যে গত কয়েক দশকে কফির জনপ্রিয়তা বাড়লেও দেশে কফি চাষের ঐতিহ্য নেই। কিন্তু নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস কফি চাষেই সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন। শুধুমাত্র অদম্য কৌতূহল থেকে তিনি দেশে কফি চাষের ইতিহাস বদলাতে চলেছেন।
নিজের কফি গাছের সামনে আব্দুল কুদ্দুস। ছবি: স্টার

বাংলাদেশে উন্নত মানের চা উৎপাদনের ইতিহাস অনেক পুরনো। কিন্তু উষ্ণ পানীয়ের মধ্যে গত কয়েক দশকে কফির জনপ্রিয়তা বাড়লেও দেশে কফি চাষের ঐতিহ্য নেই। কিন্তু নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস কফি চাষেই সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন। শুধুমাত্র অদম্য কৌতূহল থেকে তিনি দেশে কফি চাষের ইতিহাস বদলাতে চলেছেন।

২০০৯ সালে নার্সারি মালিক সমিতির একটি সভায় প্রথম কফি চাষের কথা শোনেন সত্তরোর্ধ্ব আব্দুল কুদ্দুস। কিন্তু কফি চাষের আগ্রহ থাকলে কি হবে, প্রথমে তো এর চারা লাগবে। কুদ্দুসের ভাষায়, “অনেক দিন থেকেই আমি এটা চাষ করতে চাইছিলাম কিন্তু চারা জোগাড় করতে পারছিলাম না।”

স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজল কাদিরও কুদ্দুসের এই কফি প্রীতির কথা জানতেন। তিনি জানান, প্রায় সারা জীবন ধরেই তিনি কফি চাষের খুঁটিনাটি জানার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন।

অবশেষে ২০১৪ সালে কুদ্দুসের অপেক্ষার পালা শেষ হয়। তিনি বলেন, “সে বছর আমি কক্সবাজার থেকে মোট ২৫৪টি কফির চারা কিনে আনি।” কিন্তু চারা পেলে কি হবে এর চাষ পদ্ধতি নিয়ে কোন ধারণাই ছিল না তার।

“এটা কিভাবে চাষ করতে হয় জানতে আমি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিসে গিয়েছিলাম, কিন্তু এ নিয়ে তারা কোন আগ্রহ দেখায়নি।” এর পর শুধুমাত্র নিজের অনুমানের ওপর নির্ভর করে ১৫ শতাংশ জমিতে চারাগুলো ফাঁক ফাঁক করে রোপণ করেন কুদ্দুস।

চারা লাগানোর কিছু দিনের মধ্যেই নতুন পাতা ছাড়তে শুরু করে কফি গাছগুলো। জৈব সার পেয়ে দ্রুত বাড়তে শুরু করে সেগুলো। উচ্চতা পাঁচ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে তিনি গাছগুলো ছেঁটে দেন।

আব্দুল কুদ্দুসের নিজের উৎপাদিত কফি। ছবি: স্টার

দুই বছর পর ২০১৬ সালে কফি গাছে নিজের পরিশ্রমের ফসল দেখতে পান কুদ্দুস। ফল আসতে শুরু করে কফি গাছে। সময়ের সাথে ফলগুলো পেকে কালো হয়।

তখন পর্যন্ত বিষয়টিকে বিশেষ পাত্তা দেয়নি কুদ্দুসের পরিবার। আর দিবেই বা কিভাবে। কে কবে শুনেছে নীলফামারীতে কফি চাষ হয়?

কুদ্দুসের ছেলে আকরাম বলেন, “আমরা বাবাকে নিষেধ করেছিলাম। সব চেষ্টা বৃথা যাবে এটা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তিনি ছিলেন নাছোড়বান্দা। ফল সংগ্রহ করে ঢেঁকিতে ছেঁটে খোসা থেকে কফি বীজ বের করে আনেন তিনি।”

কিন্তু এছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না কুদ্দুসের সামনে। কফি বীজ ছাঁটার জন্য বিশেষায়িত যে মেশিন থাকে সেটা তো এখানে নেই। কফি তৈরিতে তখন তার সামনে তখন একটাই উপায় ছিল আর তা হল আটা তৈরির কল। এভাবে ৬৭ কেজি কফি পাউডার তৈরি করেন তিনি।

কফি উৎপাদন সম্পর্কে ন্যূনতম প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা না থাকার পরও কুদ্দুসের কফি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। কিশোরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা যিনি এখন নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কিশোরগঞ্জের কফির স্বাদ ও গন্ধ আসলেই খুব ভালো।

আর কুদ্দুসের কফি পান করে স্থানীয় নাগরিক কমিটির সভাপতি সাইদ হোসেন শোবুলের মনে হয়েছে আমদানি করা বিদেশি কফির তুলনায় এর স্বাদ কোন অংশেই খারাপ নয়। বরং এটাই তার বেশি ভালো লেগেছে।

কফি খেয়ে প্রশংসা করেছেন এমন লোকজনের উৎসাহে নিজের কফির লাইসেন্স করাতে রাজশাহীতে বিএসটিআই কার্যালয়ে গিয়েছিলেন আব্দুল কুদ্দুস। কিন্তু তাদের তালিকায় কফি না থাকায় তাকে ফিরে আসতে হয়। তবে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৬ এর আওতায় জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে ‘দ্য বিসমিল্লাহ কফি’ নাম দিয়ে একটি লাইসেন্স করিয়েছেন তিনি।

নীলফামারী সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আব্দুল লতিফ জানান, আট আউন্স কফিতে ১৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। “ক্লান্তি দূর করে শরীর চাঙ্গা করার জন্য এটি জনপ্রিয় পানীয়। কফি গাছ ঝোপের মত হয়। মাঝারি উচ্চতার চিরসবুজ প্রকৃতির গাছ এটি।”

ঢাকায় প্রতি কেজি কফি দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন কুদ্দুস। এ বছর কফি থেকে তার আয় হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। নিজের জমি থেকে কফির চারা বিক্রিও করা শুরু করছেন তিনি। স্থানীয় অনেকেই এখন প্রতিটি ২৫০ টাকা দরে তার কাছ থেকে কফি চারা কিনছেন।

১৫ শতাংশ জমি নিয়ে কফি চাষ শুরু করে এখন জমির পরিমাণ দ্বিগুণ করতে চাইছেন তিনি। কুদ্দুসের মতে, “সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে কফি উৎপাদন দেশের ভবিষ্যৎ কৃষির জন্য লাভজনক প্রমাণিত হতে পারে।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Three firms spending Tk 1,000cr on first private submarine cable

Three private licensees of submarine cable -- Summit Communications, CdNet Communications and Metacore Subcom Ltd -- have formed a consortium to install the cable

2h ago