পর্যটকদের পদচারণায় পুরনো ছন্দে ফিরছে দার্জিলিং
এমনিতেই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল দার্জিলিং। দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়া আন্দোলনকারী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এক অংশের নেতৃত্ব পাহাড়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের সঙ্গে সহযোগী হয়ে রাস্তায় নেমেছিল আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকেই। এবার আন্দোলনকারীর প্রধান নেতা বিমল গুরুং পাহাড়ে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক ফিরিয়ে নিলেন।
মঙ্গলবার রাতে অিডিও বার্তায় বিমল ‘বুধবার সকাল ৬ টা থেকে বনধ তুলে নিয়ে’ পার্বত্য অঞ্চল স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং পাহাড়ের স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এক অংশের নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে বৈঠক করবে।
তবে ওই বৈঠকে রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিনিধি থাকবে কিনা সেটা পরিষ্কার করা হয়নি।
মোর্চার মধ্যে চরম বিভাজনের বিষয়টি এদিনও ফের প্রকাশ্যে এসে পড়ে। মঙ্গলবার বন্ধ প্রত্যাহারের নিয়ে বিমল গুরুং তাঁর বার্তায় মোর্চার অন্য অংশের নেতৃত্বে দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, যারা আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছেন, মা দুর্গা তাদের সুবুদ্ধি দান করুন। সবাইকে তিনি শারদীয় শুভেচ্ছাও জানান।
তবে বিমলের এমন তির্যক খোঁচার জবাবে সরকারপন্থি মোর্চার নেতৃত্বের বর্তমান মুখপাত্র বিনয় তমাংও উল্টো কামান দেগেছেন। বলেছেন, ‘জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে পাহাড়ের অশান্তি ছাড়িয়ে রাখা পাহাড়বাসী বরদাস্ত করেনি।’
বনধ প্রত্যাহার নিয়ে শিলিগুড়ির সাংবাদিকদের সরকারের পক্ষে জেলা শাসক জয়সী দাশগুপ্ত বলেন, ‘ওনার যদি পাহাড়ের প্রতি এতো ভালবাসা থাকে তবে সিকিম-জঙ্গল যেখানেই লুকিয়ে থাকুন সেখান থেকে পাহাড়ের ফিরুন, এরপর তিনি তাঁর কথা বলুন।’
১২ জুন থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভেঙে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে দার্জিলিং, কালিংপংসহ সমতলের বেশ কিছু অঞ্চলে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এর আগে জিটিএ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) প্রধান বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে জিটিএ-অর্থ তছরুপের অভিযোগ এনে রাজ্য সরকার গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভেঙে দিয়েছিল।
অভিযোগ উঠছে, ওই দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে বিমল গুরুং, রোশন গিরির মতো এক সময়ের তৃণমূল ঘনিষ্ঠ পাহাড়ি নেতৃত্ব পৃথক রাজ্যের দাবিকে সামনে এনে আন্দোলন শুরু করে। পাহাড়ে পরিকল্পনামতো অশান্তি ছড়ায়।
জুনের প্রথম দিকে আন্দোলনের পাহাড়ের বহু জায়গায় লাগাতার সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে জনজীবনে নেমে আসে স্থবিরতা, পর্যটন শূন্য হয়ে অর্থনীতিও ভেঙে পড়ে দ্রুততার সঙ্গে। ব্যাংক-বিমা-স্কুল-কলেজসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানুষের জীবনে চরম অবস্থার তৈরি হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ের মানুষ আস্তে আস্তে আন্দোলনের বিরুদ্ধে মুখ খুলছিলেন। আর তখনই রাজ্য সরকার আন্দোলনকারীর এক অংশের নেতৃত্বের সঙ্গে কৌশলে আলোচনায় বসে পরিস্থিতি মোকাবিলার পথ বের করে।
২৯ আগস্ট, ১২ সেপ্টেম্বর দুই দফায় আলোচনায় অংশ নেয় গোর্খার দ্বিখণ্ডিত অংশের নেতৃত্ব বিনয় তমাং ও অসীত থাপার মতো নেতারা। ১২ সেপ্টেম্বরই আন্দোলনকারীদের সরকারপন্থি অংশের নেতৃত্ব পাহাড় স্বাভাবিক করার ঘোষণা করেন।
আন্দোলনকারীর মূল অংশের বনধ প্রত্যাহারের ঘোষণার পরপরই পাহাড়ের দৃশ্য পাল্টে গিয়েছে। পর্যটক ফিরছেন পাহাড়ে। সরকারি ছুটি থাকায় সরকারি অফিস-আদালত খুলেনি। তবে দোকান-বাজার স্বাভাবিকভাবে খুলছে। সমতল থেকে পাহাড়ে যাওয়া-আসা শুরু হওয়ায় পরিবহন ব্যবসায় গতি ফিরেছে।
Comments