ফুরফুরে বাংলাদেশের সামনে ফাঁপরে পড়া অস্ট্রেলিয়া
বাংলাদেশের ঘূর্ণি পিচে পড়া বলের মতো ঘুরছে যেন অস্ট্রেলিয়ানদের মাথাও। তালগোল পাকিয়ে গেছে, গোলমেলে লাগছে সব। সিরিজে সমতা আনার মিশনে কোন এগারোজন নামাবে, ঠিক হয়নি তাই আগেরদিনও। অস্ট্রেলিয়ানদের ক্রিকেট রীতিতে যা একেবারেই বেখাপ্পা। ওদিকে স্টিভেন স্মিথদের অমন ফাঁপরে পড়াকে নৈতিক জয় হিসেবেই দেখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) খেলার আগের দিন চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণ হয়েছে। ভেস্তে গেছে দুদলের মূল মাঠের অনুশীলন। উৎসবের আমেজে থাকা বাংলাদেশ দল তা নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নয়। উইকেট কেমন হবে তা তো জানাই আছে। গেল ইংল্যান্ড সফরে চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়েই ফলদায়ক টার্নিং পিচের যাত্রা শুরু। সে ম্যাচ হারলেও খেলা হবে ওইরকম পিচেই। ঢাকায় আগের টেস্টেই অস্ট্রেলিয়ানদের যে এই পরীক্ষিত অস্ত্রেই কাবু করা গেছে। টার্নিং পিচই হচ্ছে জানেন অসিরাও, তবু ধন্দ যেন কাটছে না তাদের।
দুদলের ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে উইকেট নিয়ে দুই অধিনায়কের দুরকম হাবভাব। উইকেট নিয়ে খুশি মুশফিক, রাখঢাক না রেখেই জানিয়েছেন তা। বৃষ্টি বিড়ম্বনায় উইকেট নেড়েচেড়ে দেখতে পারেননি স্মিথরা। আটকে গেছে তাই একাদশের নামধামও। জানিয়েছেন, ‘আমরা একাদশ জানাব কাল টসের সময়। আরেক দফা পিচ দেখা দরকার, ওটা এখন ঢেকে রাখা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে এখনো দেখতে পারিনি।’
স্মিথের একাদশের নাম জানানোর কথা মুশফিককে মনে করিয়ে দিতে বললেন, ‘এটা নৈতিক জয় তো অবশ্যই। তারা হয়তো চাপে আছে। গত টেস্টে তারা যে লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে, তাতে তারা জেনে গেছে যে হোম কন্ডিশনে আমরা কতোটা ডেঞ্জারাস।’
স্মিথরা চাপে তো আছেনই বাংলাদেশে এসে বৃষ্টিও পিছু ছাড়ছে না তাদের। ইন্সটাগ্রামে বৃষ্টির ভিডিও পোস্ট করে নিজেদের অস্বস্তি লুকাননি স্মিথ, ওয়ার্নাররা। ঢাকায় এসে প্রস্তুতি ম্যাচটাও ডুবে যায় অতিবৃষ্টির দাপটে। পেশাদার ক্রিকেটার বলেই মুখে নেই অজুহাত, আছে সাকিবদের দাপটের কথাই। স্মিথ বললেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলে খুব ভালো হতো। তবে অজুহাত দাঁড় করাবো না। আমরা ভালো খেলতে পারিনি। বাংলাদেশ স্রেফ আমাদের উড়িয়ে দিয়েছে।’
ইনজুরির কারণে দেশে ফিরে গেছেন পেসার জস হ্যাজলউড। অস্ট্রেলিয়া একাদশে একটা পরিবর্তন নিশ্চিতই। তার বদলে যাকে উড়িয়ে আনা হয়েছে সেই বাঁহাতি স্পিনার স্টিভেন ও’কিফ ভারত সফরের হিরো ছিলেন। একাদশে তিনিসহ তিন স্পেশালিষ্ট স্পিনার থাকছেন ধরেই নেওয়া যায়। ড্যারেন লেম্যান এই ধরনের পিচে পেসার খেলানোর কোন লাভ দেখছেন না। চার দশক পর অস্ট্রেলিয়া তাই নামতে পারে এক পেসার নিয়ে। ওদিকে উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান ম্যাথু ওয়েডের উপর বেজায় খ্যাপা সাবেক ক্রিকেটাররা। অফ ফর্মের ওয়েডের বদলে কিপিং গ্লাভস পরতে পারেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। খেলিয়ে দেওয়া হতে পারে পেস অলরাউন্ডার হিল্টন কার্টরাইটকেও।
বাংলাদেশ একাদশে ফিরতে পারেন মুমিনুল হক। লেম্যানের মতো ভাবছে হয়ত বাংলাদেশও। এই ধরনের পিচে দুই পেসার খেলিয়ে কি লাভ? কয়েক ওভার হাত ঘুরানোর কাজটা সৌম্য সরকারকে দিয়ে চালিয়ে একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়েই নামতে পারে টাইগাররা।
অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করতে চায় বাংলাদেশ। বারবার উচ্চারণ করেছেন মুশফিক। আর বাংলাদেশে এসে সিরিজ খুইয়ে যাওয়া প্রথম কাপ্তান হতে কোনভাবেই চান না স্টিভেন স্মিথ। কন্ডিশন সঙ্গে নিয়ে স্বাগতিকদের হুঙ্কার সত্ত্বেও তাই মরিয়া অসিরা। মাঠের খেলায় কি হবে দেখার আগে অবশ্য আকাশের দিকে নজর সবার। আবহাওয়া বার্তায় যে আগামী পাঁচদিন জুড়েই চট্টগ্রামে থাকছে বৃষ্টির আভাস।
বুধবার (৩০ আগস্ট) অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারিয়ে প্রথম টেস্ট জিতে নেয় বাংলাদেশ। সোমবার চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
Comments