বাবার খোঁজে ঢাকায়

জন্মের পর মাত্র আড়াই বছর বাবাকে কাছে পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের নাগরিক জেমি হেনশ্যাল। মায়ের বিয়ের সার্টিফিকেট থেকে জেনেছেন বাবার নাম সুয়াব আলী ও দাদা উমাদ উল্লাহ। পুরনো ঢাকায় তাদের বাড়ি। নিজের পূর্বপুরুষ সম্পর্কে এটুকুই জানেন তিনি। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই সম্প্রতি শিকড়ের টানে বাবাকে খুঁজতে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।
ফোনে ১৯৭৯ সালে তোলা বাবা-মায়ের বিয়ের ছবি দেখাচ্ছেন জেমি হেনশ্যাল।

জন্মের পর মাত্র আড়াই বছর বাবাকে কাছে পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের নাগরিক জেমি হেনশ্যাল। মায়ের বিয়ের সার্টিফিকেট থেকে জেনেছেন বাবার নাম সুয়াব আলী ও দাদা উমাদ উল্লাহ। পুরনো ঢাকায় তাদের বাড়ি। নিজের পূর্বপুরুষ সম্পর্কে এটুকুই জানেন তিনি। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই সম্প্রতি শিকড়ের টানে বাবাকে খুঁজতে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।

৮০’র দশকে হেনশ্যালের বাবা-মা সুয়াব আলী ও অ্যান হেনশ্যালের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর-পরই দেশে ফিরে আসেন সুয়াব আলী। বাংলাদেশ থেকে আর কখনোই সাবেক স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি তিনি। ফলে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া বাবার কিছু ছবি ছাড়া আর কোনও স্মৃতি নেই তার।

গত ৪ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন হেনশ্যাল। সঙ্গে আনেন ১৯৭৯ সালে তোলা বাবার কয়েকটি ছবি। ছবিগুলো যখন তোলা হয় তখন লন্ডনে একটি রেস্টুরেন্টে শেফ হিসেবে কাজ করতে সুয়াব আলী। তার বাবা অর্থাৎ হেনশ্যালের দাদা পুরনো ঢাকায় একটি চামড়ার কারখানায় কাজ করতেন।

বাংলাদেশে দুই সপ্তাহ অবস্থান করেন হেনশ্যাল। তিনি জানান, বেঁচে থাকলে তার বাবার বয়স হবে ৬২ বছর। তবে বাবাকে খুঁজে বের করতে মাত্র দুই সপ্তাহ সময় হয়তো যথেষ্ট ছিলো না।

ঢাকার একটি হোটেলের লবিতে হেনশ্যালের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নিজের সফর সম্পর্কে তিনি বলেন, আপন ঐতিহ্যকে খুঁজে বের করার যাত্রায় এটা অনেক বড় পদক্ষেপ ছিলো।

অ্যান হেনশ্যাল ও সাবু আলি ১৯৭৯ সালে লন্ডনে বিয়ে করেন। জন্মের সময় বাবা তার নাম রাখেন মোহাম্মদ হোসেন আলী। তবে পরবর্তীতে মা নাম পাল্টে জেমি হেনশ্যাল রাখেন।

হেনশ্যালকে তার মা জানায়, “সে সময় লন্ডনে একটি রেস্টুরেন্টে শেফ হিসেবে কাজ করতেন তার বাবা। জরুরি প্রয়োজনে তাকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে হয়েছিল।”

“বাবা আমাকে সঙ্গে করে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার মায়ের ইচ্ছা ছিলো আমি ওখানেই থেকে লেখাপড়া করি। আমাকে সাথে রাখতে শুধুমাত্র একটি সুটকেস ও আমাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন মা।”

তিনি জানান, ১৯৮৬ সালে যুক্তরাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন বাবা। দেশে আসার সময় তিনি নিজের সব জিনিসপত্র সঙ্গে করে আনেন। এ কারণে বিয়ের ছবি ছাড়া তার আর কোনও স্মৃতি চিহ্ন নেই।

হেনশ্যাল বলেন, “খুব শিগগিরই আমি নিজেও বাবা হতে চলেছি। আমার পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে জানা আমার সন্তানের জন্য সত্যিই খুব জরুরি। এ কারণেই নিজের শিকড়ের খোঁজে বেরিয়েছি।”

বাংলাদেশে আসার পর ঢাকার পুরনো এলাকায় দুই সপ্তাহ কাটিয়েছেন হেনশ্যাল। সারা জীবন ধরে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বেড়িছেন এখানে এসে তার কিছু উত্তর পেয়েছেন তিনি।

পুরনো ঢাকার মানুষদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আমার নিজেকে বুঝতে সাহায্য করছে পুরনো ঢাকা। আমি বুঝেছি মিষ্টি খাবারের প্রতি ঝোঁক, সাহস, পরিশ্রমের মানসিকতা ও ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা আমি কোথা থেকে পেয়েছি।”

শিশু অবস্থায় বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে চলে এলে জীবন কেমন হতো সেটা হেনশ্যালকে ভাবাতো। এই সফর তাঁকে এটা বুঝতেও কিছুটা সহায়তা করেছে।

বাবার মতই হেনশ্যালেরও রান্নার প্রতি প্রবল ঝোঁক। ১৫ বছর বয়সেই অভিজাত রেস্টুরেন্টে শেফের কাজ করেছেন। নয় বছর আগে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান শেফ হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখন সেখানে খাবার নিয়ে নিজস্ব একটি মিডিয়া এজেন্সি চালান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

More than 600 dengue cases reported in a day; 1 more die

The number of dengue cases in the country has crossed 600 in a single day for the first time this year, as experts urge authorities to take urgent measures to control the spread of the disease

1h ago