বাড়ছে মোটা চালের দাম

নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্রের পাশাপাশি গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মোটা চালের। গত বছর জুনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এর দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামের ওপর রাষ্ট্রায়ত্ত যে প্রতিষ্ঠানটি নজর রাখে সেই ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে দাম বাড়ার এই চিত্র পাওয়া গেছে।
মূলত নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের লোকজন মোটা চালের ওপর নির্ভরশীল। এই সময়ের মধ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিয়ে বেসরকারিভাবে এক লাখ টন চাল আমদানি করা হলেও এ সপ্তাহে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৫-৪৬ টাকায়। অন্যদিকে গত বছর জুনে এর দাম ছিল ৩০-৩৪ টাকা। আর এই এক বছরে ভালো ও মধ্যম মানের চালের দাম বেড়েছে ৯ থেকে ২০ শতাংশ।
চালের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের যেমন কষ্ট বেড়েছে, তেমনি বিষয়টি সরকারকেও উদ্বিগ্ন করেছে। এই উদ্বেগের আরেকটি কারণ হল সরকারি শস্যভাণ্ডারগুলোতে এখন মাত্র আড়াই লাখ টন চাল মজুদ রয়েছে যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
হাওর অঞ্চলের সাতটি জেলায় এ বছর আগাম বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। আর ১৯টি জেলায় ধানক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণে (ব্লাস্ট রোগ) উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুই কারণে এ বছর ১০ লাখ টনের বেশি বোরো ধান নষ্ট হয়েছে।
এমন অবস্থায় ভিয়েতনাম থেকে জরুরিভিত্তিতে তিন লাখ টন চাল আমদানির সমঝোতা স্মারক নবায়ন করেছে সরকার। ২০১১ সালে ভিয়েতনামের সাথে ওই সমঝোতা স্মারকটি করেছিল বাংলাদেশ।
এ বাদে আরো দেড় লাখ টন চাল আমদানি করতে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ।
অর্থমন্ত্রী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সংসদে প্রস্তাব করার পরদিনই কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী চালের দাম বৃদ্ধির জন্য হাওরের বন্যাকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সরকার চাল আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে দ্রুত চালের দাম কমার ব্যাপারে আশ্বাস দেন তিনি।
তবে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকারের এই বিলম্বিত উদ্যোগ কতটা সফল হবে সে ব্যাপারে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এর একটি কারণ হল, চালকল মালিকদের সরকার যে যে দাম প্রস্তাব করেছে তা তাদের আকৃষ্ট করছে না। আর আগামী জুলাইয়ের মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা চাল বন্দরে পৌঁছানোরও সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
এই পরিস্থিতিতে আরেকটি খারাপ খবর হল, বাজারের সূত্রগুলো থেকে দ্য ডেইলি স্টার জেনেছে গত দুই সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বাড়ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ের সূত্রগুলো জানায়, এক লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার টন আতপ চাল আমদানির জন্য গত মে ও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে অল্প সময়ের ব্যবস্থানে তিনটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে সরকার। প্রথম দরপত্রে ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল সরবরাহ করতে সর্বনিম্ন দর দিয়েছে দুবাই ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সুখবির এগ্রো এনার্জি। প্রতি টন চালের জন্য তারা ৪২৭ দশমিক ৮৫ ডলার দর প্রস্তাব করেছে। আর দুবাইভিত্তিক এগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল ৫০ হাজার টন আতপ চালের জন্য সর্বনিম্ন দর দিয়েছে। প্রতি টনে তারা ৪০৬ দশমিক ৪৮ ডলার দাম চেয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আরো ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য তৃতীয় টেন্ডারটি খোলা হবে ১১ জুন।
চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ লেভি দেওয়ার পর প্রতি কেজি চালের আমদানি খরচ পড়বে ৪৪ টাকা যা স্থানীয় কৃষক ও চালকল মালিকদের জন্য প্রস্তাবিত দামের চেয়ে ১০টাকা বেশি।
চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৩ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর জন্য প্রতি কেজিতে দর নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ টাকা যা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশার চেয়ে কম। কারণ এখনই তারা স্থানীয় বাজারে ৪২-৪৪ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন।
সরকারিভাবে বোরো সংগ্রহ শুরু হওয়ার এক মাস পার হয়েছে। কিন্তু এই এক মাসে চালকল মালিকদের কাছ থেকে মাত্র এক দশমিক ছয় লাখ টন চাল সংগ্রহের চুক্তি সম্ভব হয়েছে। তবে এই পরিমাণ চাল যে সরকার শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।
Comments