কলকাতায় শহীদ সমাবেশ

বিজেপিকে ভারত ছাড়ার ডাক দিলেন মমতা ব্যানার্জি

Mamata Banerjee
তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

আগামী ৯ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জুড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো অভিযানের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস।

শুক্রবার কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বার্ষিক রাজনৈতিক সভায় ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

একই সঙ্গে মমতা ব্যানার্জি বলেন, যারা সারদা-নারদা কাণ্ডের বিচার করছে সেই বিচার যদি সুষ্ঠুভাবে না হয় তবে হাজার হাজার কোটি টাকার মানহানি মামলা করা হবে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে।

মমতা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে একটি দাঙ্গার পরিকল্পনা করছে বিজেপি। আর সেই দাঙ্গার বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরাই পাহারাদার হিসেবে কাজ করবেন।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে জন্ম নেওয়া পশ্চিমবঙ্গের অবৈধ অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান সারদা গ্রুপের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ ছাড়াও তৃণমূল কংগ্রেসের ১৩ জন সাংসদ ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার দৃশ্য প্রকাশ করা হয় নারদা ডট কম নামের একটি পোর্টালে। দুটি মামলা বর্তমানে সিবিআইয়ের তদন্তাধীন রয়েছে।

শুক্রবার শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জি ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী, নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং তৃণমূল সমর্থকরাও উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে উঠে নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন এক সময়ের তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ সাংসদ বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী কবীর সুমন। সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী ছাড়াও টালিগঞ্জের এক ঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রী উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে। এদিন শহীদ মঞ্চে উঠেন অভিনেত্রী ইন্দ্রানী হালদারসহ বেশ কয়েকজন সেলিব্রেটিও।

১৯৯৩ সালে তৎকালীন যুব-কংগ্রেসের একটি প্রতিবাদ মিছিলে পশ্চিমবঙ্গের সেই সময়ের শাসক বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। ওই গুলিতে ১৩ জন যুব-কংগ্রেসের কর্মী নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন পঙ্গুত্ববরণ করেন। ওই ঘটনার পর থেকেই মমতা ব্যানার্জি এই দিনটিকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করতেন। পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করার পর থেকেই রাজনৈতিকভাবে এই দিবসটি একটি বড় প্রচারের আলোয় আনার চেষ্টা করেছন মমতা।

এদিন এই দিবসের প্রধান বক্তা হিসেবে মমতা ব্যানার্জি মূলত কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগান। বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের অর্থনীতি থেকে পররাষ্ট্র নীতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়েও তীব্র কটাক্ষ করেন মমতা।

তৃণমূল সভানেত্রী বলেন, বিজেপি দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে। রাজ্যজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অপব্যবহার করে তারা সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। এর বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের পাহারাদার হিসেবে সহযোগিতা করতে হবে। রাজ্যে কোনও দাঙ্গা বাধানোর ছক বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। ফেসবুককে সম্মান করি কিন্তু ফেকবুককে নয়, তাই ফেসবুকে এমন কোনও পোস্ট দেখলেই পুলিশকে খবর দেবেন।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ করে দিয়েছে বিজেপি, গুজরাটের হিরেতে জিএসটি বসানো হচ্ছে ৪ শতাংশ আর পশ্চিমবঙ্গের জিরের ওপর বসানো হচ্ছে ১৪ শতাংশ। অর্থনীতির সঙ্গে বিদেশনীতিও হুমকির মুখে। বাংলাদেশসহ কারো সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো নেই আজ, বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকে ইঙ্গিত করে কলকাতার এই সভায় মমতা বলেন, যতই করুক নারদা-সারদা, সামনে ২০১৯ সালে দেখবেন ভারত ছেড়ে পালাবেন বড়দা।

বিজেপিকে ভারত ছাড়া করার কথা ঘোষণা করে মমতা এদিন আন্দোলনের কর্মসূচী জানিয়ে বলেন, আগামী ৯ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে বিজেপি ভারত ছাড়ো আন্দোলন পরিচালনা করবে তৃণমূল কংগ্রেস। জেলায়, মহকুমায়, থানায় এবং ব্লকে ব্লকে মিছিল-সমাবেশ-মিটিং করবে তৃণমূল। স্থানীয় মন্ত্রীরা তাতে নেতৃত্ব দেবেন। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা করা হবে কলকাতায়।

শহীদ দিবস নিয়ে মমতা এদিন বলেন, ১৯৯৩ সালে যাদের গুলিতে পাখির মতো রাজনৈতিককর্মী নিহত হয়েছেন সেই মামলায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রত্যেক অভিযুক্তকেই আইনের কাঠগড়ায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দেওয়া হবে। ওই বিক্ষোভ মিছিলে নিহত হওয়া ১৩ জন শহীদের পরিবারকে রাজ্য সরকার ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে।

কলকাতায় এই সমাবেশে যোগ দিতে রাজ্যের ২৩ জেলা থেকে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন বলে তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করে। কলকাতাসহ শহরতলীর বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েকশো জায়েন্ট স্ক্রিনে মমতার সভার লাইভ কভারেজ দেখানো হয়।

২১ জুলাই এই সমাবেশে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য এক হাজার সিসিটিভি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও ড্রোন ক্যামেরা দিয়েও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে কলকাতা পুলিশ।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

4h ago