গাইবান্ধায় বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপরে ব্রহ্মপুত্র

রেললাইনের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বন্যার পানি। ছবিটি দিনাজপুর সদর উপজেলার কাউগা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: স্টার

দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় কয়েকটি নদীতে পানি বেড়েছে ও কয়েকটিতে কমেছে। এর মধ্যে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদ বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে নদীর বাঁধ ভেঙে চারটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।

গত রাতে ঘাগট নদীতে গাইবান্ধা শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। নদীটি বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে গাইবান্ধার সদর, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও শাঘাটা উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে। ৫০০ মেট্রিকটন চাল ও পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

অন্যদিকে বালাশিঘাট পয়েন্টে মাত্র এক দিনে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ সকালে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপরে রেকর্ড করা হয়েছে। ফুলছড়িতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে একটি দুর্বল বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বন্যার পানিতে সড়ক ও রেললাইন ডুবে যাওয়ায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের বেশ কিছু এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত এসব এলাকায় যোগাযোগ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি।

বন্যায় রেললাইনের মাটি ও পাথর সরে যাওয়ায় দিনাজপুরের সাথে পার্বতীপুর ও পঞ্চগড়ের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়াও লালমনিরহাটের সাথে বুড়িমারি, তিস্তা জংশন ও রমনা বাজারের মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নীলফামারীর সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুরের বদরগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের প্রায় হাজার খানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে অথবা বন্যা কবলিত লোকজন এসব জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ধরলা ও তিস্তা নদীতে পানি কমলেও দুধ কুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানির উচ্চতা বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ধরলা সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। দুদিন আগে এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়াও এই জেলা দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার নিচে, দুধকুমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপরে ও ব্রহ্মপুত্র ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

অন্যদিকে লালমনিরহাট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সেখানে পানিতে ডুবে থাকা প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি নেমে গেছে বলে স্থানীয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন। বন্যাকবলিত বহু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে নতুন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

রাজশাহীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই জেলায় নতুন করে প্রায় ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

অন্যদিকে সুরমা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ৫০০টি বাড়ি নতুন করে বন্যাক্রান্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ভুঁইয়া আমাদের মৌলভীবাজার প্রতিনিধিকে জানান, আজ সকালে সুরমা নদী বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

দিনাজপুরে দুই শিশুসহ পাঁচ জন নিহত ও আরও একজন নিখোঁজ হয়েছেন। এ নিয়ে গত তিন দিনে দেশে বন্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনায় মোট ২০ জনের প্রাণ গেছে।

Click here to read the English version of this news

Comments