মানুষ একজন, রক্তের গ্রুপ ২টি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়িতে এমন এক মানুষ পাওয়া গিয়েছে যাঁর শরীরে দুই গ্রুপের রক্ত রয়েছে। চিকিৎসকরা এমন ঘটনাকে বিরলতম বলে জানালেও প্রতি দশ লাখে এমন একজন পাওয়াটাকে স্বাভাবিক মনে করছেন তাঁরা।
জলপাইগুড়ির জেলার সদর ব্লকের বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর মাম্পি রায়ের শরীরে “এ বি পজিটিভ” এবং “এ বি নেগেটিভ” গ্রুপের রক্তের সন্ধান মিলেছে।
জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর সাংবাদিকদের জানান, “রক্তে লোহিতকণিকার মধ্যে অ্যান্টিজেন রেসেস ফ্যাক্টর বা আরএইচ ফ্যাক্টর হয়ে কাজ করায় একই মানুষের শরীরের দুই গ্রুপের রক্তের লক্ষণ পাওয়া যায়।”
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন কলকাতার এন. আর. এস হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার প্রান্তর চক্রবর্তীও। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, আরএইচ ফ্যাক্টরের রকমফেরে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের অনেক সময় এমন বিভ্রান্তি তৈরি হয় বৈকি।
তবে জলপাইগুড়ির সেই নারীর শরীরের রক্ত কলকাতা মেডিকেল কলেজের ইমিউনো হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। সেখানে চূড়ান্তভাবে দেখা সম্ভব ওই নারীর শরীরে সি. বি. ই ফ্যাক্টর কী কী অনুপাতে রয়েছে। সাংবাদিকদের একথাও যোগ করেন ডাক্তার প্রান্তর চক্রবর্তী।
জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, গত ৩০ জুলাই রক্তস্বল্পতা-জনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হোন একুশ বছর বয়সী মাম্পি রায়। চিকিৎসকরা তাঁকে রক্ত দেওয়ার জন্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে তা ল্যাবে পাঠান। সেখানে তাঁর রক্তে “এবি নেগেটিভ” পাওয়া যায়। মাম্পি রায় ওই গ্রুপের রক্ত তাঁর নয় বলে অস্বীকার করেন। চিকিৎসকরা ওই দাবি শুনে বিভ্রান্ত হোন। এবং আবারও রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার জন্যে হাসপাতালের সরকারি ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে দেখা যায় তাঁর রক্ত “এ বি পজিটিভ”। এতেই হাসপাতালে রীতিমত হৈচৈ পড়ে যায়।
জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা এসে মাম্পি রায়ের রক্ত আবারও দুটি পৃথক ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এবার একই রক্তের দুটি গ্রুপের রিপোর্ট আসে।
জলপাইগুড়ির সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা এবার কলকাতার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বুধবার কলকাতা থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর মাম্পি রায়ের শরীরে এ বি নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, এই গ্রুপের রক্তধারীদের রক্ত নিতে হলে সংশ্লিষ্ট গ্রুপের নেগেটিভ রক্ত নিতে পারবেন। কিন্তু অন্যদের দিতে হলে একই গ্রুপের পজিটিভ রক্ত দিতে হবে। বুধবার মাম্পি রায়কে রক্ত দেওয়ার পর আজ দুপুর (৩ আগস্ট) পর্যন্ত তাঁর শারীরিক অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে বলে হাসপাতালের সুপার যোগ করেন।
Comments