যানজট এড়াতে হেলিকপ্টারে ঈদযাত্রা!
যদি আপনার হাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা থাকে তাহলে ঈদের বিরক্তিকর যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি যাওয়ার একটা ব্যবস্থা হতে পারে – তা হলো হেলিকপ্টারে ঈদযাত্রা।
ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছর কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যান প্রিয়জনদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে। কিন্তু, তীব্র যানজট, অতিরিক্ত যাত্রী বহন অথবা শিডিউল বিপর্যয়ের ফলে বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে বাড়ি যেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় তাঁদের। এরপর, বোঝার ওপর শাকের আঁটি হিসেবে যোগ হয় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, এমন পরিস্থিতিতে অনেক সচ্ছল ব্যক্তি হেলিকপ্টারে বাড়ি যাওয়াটাকে পছন্দ করতে পারেন। দেশে ১০টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৫টি হেলিকপ্টার নিয়ে এই সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এর ভাড়াটা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। যেমন, ছয় আসনের একটি হেলিকপ্টারে ঘণ্টায় খরচ পড়বে এক লাখ টাকার মতো।
দেশের সবচেয়ে বড় হেলিকপ্টার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আর অ্যান্ড আর এভিয়েশনের চিফ অব প্রটোকল ফরহাদ আলম জানান, ঈদ উপলক্ষে তারা ‘ভালো সাড়া’ পাচ্ছেন।
গত ১৯ জুন দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা অনেকগুলো বুকিং পেয়েছি এবং আরও বুকিং পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
হেলিকপ্টার সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালে। এদের তিন, চার, ছয় এবং সাত সিটের মোট ছয়টি হেলিকপ্টার রয়েছে। যাত্রীরা প্রতি ঘণ্টায় ৭১,৩০০ টাকা থেকে ১৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করে এই সেবা নিতে পারেন। তাঁর মতে, বিদেশি ক্রেতা, ব্যবসায়ী এবং ভিআইপিরা এই সেবা গ্রহণ করেন।
তবে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টার সেবা বিঘ্নিত হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিআরবি এয়ার লিমিটেডের ফ্লাইট অপারেশনস ম্যানেজার তানজীব মজুমদার বলেন, ২২ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত তাদের সব ফ্লাইটের বুকিং এক সপ্তাহ আগেই হয়ে গেছে।
তাদের হেলিকপ্টার চড়তে প্রতি ঘণ্টায় একজন যাত্রীকে ১ লাখ টাকা দিতে হয়। এ বাদেও বিআরবি’র হেলিকপ্টারে কোথাও গেলে রিটার্ন টিকেটের ভাড়াও দিতে হয়।
তিনি আরও জানান, দিন দিন তাদের হেলিকপ্টার সার্ভিসের চাহিদা বাড়ছে।
স্কয়ার এয়ার লিমিটেড এর ফ্লাইট অপারেশনস ম্যানেজার শেখ আসাদ বলেন, প্রতি বছর ঈদের আগে হেলিকপ্টার সার্ভিসের চাহিদা বেড়ে যায়। আগের বছরের তুলনায় এ বছরেও চাহিদা বেড়েছে।
তিনি জানান যে বিদেশি নাগরিক, ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এই সেবার প্রধান গ্রাহক। স্কয়ারের একটি ছয় আসনের এবং একটি চার আসনের হেলিকপ্টার রয়েছে। ছয় আসনের হেলিকপ্টারের জন্যে তারা ঘণ্টা প্রতি এক লাখ টাকা নেন এবং রোগীদের জন্যে তা কমিয়ে ৯০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। চার আসনের হেলিকপ্টারে নেওয়া হয় ৬৫ হাজার টাকা।
মেঘনা এভিয়েশন লিমিটেডের একাউন্টস অ্যান্ড কাস্টমার কেয়ার অফিসার মঞ্জুর আলম বলেন, ঈদের আগে তাদের আরও কয়েকটি ফ্লাইট রয়েছে।
তবে কুলিয়ারচর এভিয়েশন লিমিটেড এর জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন এন্ড ফিন্যান্স) আহসানুল কবির জানান, ‘খারাপ আবহাওয়ার কারণে’ এবার তারা ভালো সাড়া পাননি।
ঈদের সময় সড়কপথে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হলে তাদের হেলিকপ্টারের চাহিদা বাড়তে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
হেলিকপ্টারের কোন নির্দিষ্ট রুট নেই উল্লেখ করে আহসানুল আরও জানান, একটি ফ্লাইট চালানোর তিন দিন আগে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। তবে, জরুরি অবস্থার প্রেক্ষিতে, বিশেষ করে চিকিৎসার জন্যে, এক-দুই ঘণ্টা আগে অনুমতি নেওয়া যায়।
সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স লিমিটেড (এসএএএল) বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার চালানো শুরু করেছিলো প্রায় দেড় দশক আগে। তবে, ২০১০ সালের পর থেকে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা খুঁজে নিচ্ছে।
ফ্লাইট অপারেটরদের মতে, সড়কপথে যানজট এড়ানো ও স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্যে ব্যবসায়ী, কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ, বিদেশি ক্রেতা এবং দাতাগোষ্ঠীদের বিশিষ্টজনেরা ঢাকার বাইরে কোন পরিদর্শনে যাওয়ার সময় হেলিকপ্টারকে সহজ মাধ্যম হিসেবে ভাড়া নেন।
বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স লিমিটেড, ইমপ্রেস এভিয়েশন লিমিটেড, পারটেক্স এভিয়েশন লিমিটেড এবং বসুন্ধরা এয়ারওয়েজেরও হেলিকপ্টার সেবা রয়েছে বলে তাঁরা জানান।
Comments