রসিক রবীন্দ্রনাথ!

Rabindranath Tagore
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীত

বহুমাত্রিক সাহিত্য প্রতিভার অধিকারী দার্শনিক রবীন্দ্রনাথের কাব্যমানসে ছিল হাস্য রসিকতা। মোটেই রাশভারী বা গুরুগম্ভীর ছিলেন না তিনি। বরং সবার সঙ্গে সহজ, সরল ছিল তাঁর ব্যবহার। কবিগুরুর ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু মজার ঘটনা নিয়ে এ আয়োজন।

শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক বিধুশেখর শাস্ত্রীকে রবীন্দ্রনাথ একবার লিখে পাঠালেন, “আজকাল আপনি কাজে অত্যন্ত ভুল করছেন। এটা খুবই গর্হিত অপরাধ। এজন্য আগামীকাল বিকেলে আমি আপনাকে আমি দণ্ড দিব।”

গুরুদেবের এমন কথায় শাস্ত্রী মশাই তো একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। এমন কী অন্যায় তিনি করেছেন যার জন্য তাঁর দণ্ডপ্রাপ্য?

চিন্তিত ও শঙ্কিত শাস্ত্রী মশাই নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পরদিন উপস্থিত হলেন কবির কাছে। তখনো তাঁকে বেশ কিছুক্ষণ উৎকণ্ঠার মধ্যেই বসিয়ে রাখেন কবিগুরু। অবশেষে পাশের ঘর থেকে একটি মোটা লাঠি হাতে আবির্ভূত হন রবীন্দ্রনাথ। শাস্ত্রী মশাই তখন ভয়ে কাণ্ডজ্ঞান লুপ্তপ্রায়। তিনি ভাবলেন, সত্যি বুঝি লাঠি তাঁর মাথায় পড়বে। কবি সেটি বাড়িয়ে ধরে বললেন, “এই নিন আপনার দণ্ড! সেদিন যে এখানে ফেলে গেছেন, তা একদম ভুলে গেছেন আপনি!”

Rabindranath Tagore
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীত

একদিন শান্তিনিকেতনের ছেলেদের সঙ্গে অন্য এক প্রতিষ্ঠানের ছেলেদের ফুটবল খেলা ছিল। শান্তিনিকেতনের ছেলেরা আট-শূন্য গোলে জিতে। সবাই দারুণ খুশি। তবে এ জয় দেখে রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করলেন “জিতেছে ভালো, তা বলে আট গোল দিতে হবে? ভদ্রতা বলেও তো একটা কথা আছে!”

স্বনামধন্য সাহিত্যিক ‘বনফুল’ তথা বলাইচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক ছোট ভাই বিশ্বভারতীতে অধ্যয়নের জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছেই একজনের কাছে জানতে পারেন, বয়স হওয়ার কারণে রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তিনি যখন বললেন, “কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি?” তখন বলাইচাঁদের ভাই চিৎকার করে জবাব দিলেন, “আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।” রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বলেন, “না কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে শানাই!”

একবার এক দোলপূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবি, নাট্যকার ও গীতিকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাক্ষাৎ ঘটে। তো, পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর হঠাৎ দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর জামার পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথকে বেশ রঞ্জিত করে দিলেন।

আবির রঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ রাগ না করে বরং সহাস্যে বলে উঠেন, “এত দিন জানতাম দ্বিজেন বাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন। আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়, দেহরঞ্জনেও দ্বিজেন্দ্রলাল একজন ওস্তাদ।”

Rabindranath Tagore
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্মা গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত

একবার রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গান্ধী একসঙ্গে বসে সকালের নাশতা করছিলেন। তো গান্ধীজী লুচি পছন্দ করতেন না, তাই তাঁকে ওটসের পরিজ (Porridge of Oats) খেতে দেওয়া হয়েছিল। আর রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি। গান্ধীজী তাই দেখে বলে উঠেন, “গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ।” উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “বিষই হবে; তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খেয়েই বেঁচে আছি!”

একদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিসর্জন নাটকের মহড়া চলছিল জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। নাটকে রঘুপতির ভূমিকায় ছিলেন দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো), আর জয়সিংহ সেজেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। একটা দৃশ্য ছিল এমন, জয়সিংহের মৃতদেহের ওপর আছড়ে পড়বেন শোকার্ত রঘুপতি।

দৃশ্যটার মহড়া চলছিল বারবার। দীনেন্দ্রনাথ বাবু ছিলেন স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী। মহড়ায় বারবার তাঁর ভার বহন করা রবীন্দ্রনাথের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছিল। একবার দীনেন্দ্রনাথ একটু বেকায়দায় রবিঠাকুরের ওপর আছড়ে পড়লেন। রবীন্দ্রনাথ কেঁকিয়ে উঠে বললেন, “ওহে দিনু, মনে করিসনে আমি সত্যি সত্যিই মারা গেছি!”

Comments

The Daily Star  | English
Kamal Hossain calls for protecting nation

Kamal Hossain urges vigilance against obstacles to nation-building effort

"The main goal of the freedom — gained through the great Liberation War — was to establish democracy, justice, human rights and build a society free from exploitation. But we have failed to achieve that in the last 54 years," says Dr Kamal

1h ago