রাজশাহীতে এক কুকুরের কীর্তি!

ফাইল ফটো

কাপড়ে মোড়ানো বেওয়ারিশ এক শিশুর মরদেহ সযত্নে পাহারা দিচ্ছিল রাস্তার একটি কুকুর। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই অপেক্ষা করেছে কুকুরটি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সামনের রাস্তায় এই ঘটনাটি ঘটেছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা ফজলে রাব্বি জানান, জীবিত হোক অথবা মৃত, কুকুরটির কাছে শিশুটির গুরুত্ব ছিল অসীম। কুকুরটি যত্নের সঙ্গে শিশুটির দেহ নর্দমা থেকে টেনে তুলে এনে রাস্তার পাশে রেখেছিল।

কুকুরটি এভাবে কী আগলে রেখেছে, এটাই পথচারীদের ভেতর কৌতূহল তৈরি করে। শেষে তারা সেখানে একটি অপরিণত শিশুর দেহ আবিষ্কার করেন। শিশুটি বেঁচে রয়েছে কিনা তাও বোঝার চেষ্টা করেন কয়েক জন। কেউ আবার খবর দেন থানায়।

উপস্থিত লোকজনের মনে কুকুরটির জন্য বেশ মায়া হয়। কী মমতায় আগলে রেখেছিল মৃত শিশুটিকে। কিন্তু লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ার পর সবার অলক্ষ্যে ওই জায়গা ছেড়ে চলে যায় কুকুরটি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আর তার দেখা মেলেনি।

রাজশাহী কমার্স কলেজের একজন ছাত্র খেদ প্রকাশ করে বলেন, “নর্দমা থেকে শিশুটিকে এনে রাস্তায় রেখেছিল সেই প্রাণীটির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বোধ করি আমি। কিন্তু যারা এমন কুৎসিত কাজ করেছে, তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি।”

শিশুটিকে যে জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছিল সেখানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অনেকগুলো ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে।

ঘটনাটির সময় গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে কাজ করছিলেন সেলিম রেজা। পেশায় সাইনবোর্ড শিল্পী রেজার আশা, পুলিশ দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। তিনি বলেন, “একটি সুন্দর শিশু রাস্তার পাশে পড়ে আছে; এই দৃশ্য খুবই ভয়ঙ্কর।”

রাজশাহীর রাজপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান জানান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান। মরদেহটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, “অবাক করার মতো ঘটনা যে শিশুটির শরীরে কুকুরের কামড়ের কোন চিহ্ন নেই। দীর্ঘক্ষণ নর্দমার পানিতে পড়েছিল বলে ওর শরীরের চামড়াটি খসে পড়ছিল।”

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমানুল্লাহ বলেন, শিশুটির মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা আছে। শিশুটির ডিএনএ নমুনা নিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ দাবি না করলে ডিএনএ পরীক্ষা করে তার মা-বাবাকে সনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে।

এ বিষয়ে পুলিশের পরবর্তী কাজ কি তা জানতে চাওয়া হলে উপ-পরিদর্শক মাহফুজুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ইতোমধ্যে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে যে বাচ্চাটির মা আশে-পাশের কোন ক্লিনিক বা হাসপাতালে ভর্তি আছেন কিনা। এছাড়াও, শিশুটির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে জানা যাবে তাকে হত্যা করা হয়েছিল, নাকি জন্মের সময় মৃত্যু হয়েছিল।

Click here to read the English version of this news

Comments