একটি স্বপ্নের মৃত্যু

রূপার সংগ্রাম ছিলো আইনজীবী হওয়ার

বাবার স্বপ্ন পূরণে সঠিক পথেই হাঁটছিলেন রূপা খাতুন। বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে আইনজীবী হবে। দাঁড়াবে নির্যাতিত মানুষের পাশে। তাই ২০১৪ সালে মাস্টার্স শেষ করে সিরাজগঞ্জের এই মেয়েটি এলএলবি পড়ার জন্যে ঢাকায় এসে একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিল।
rupa khatun
টাঙ্গাইলে ধর্ষণ-হত্যার শিকার রূপা খাতুন। ছবি: সংগৃহীত

বাবার স্বপ্ন পূরণে সঠিক পথেই হাঁটছিলেন রূপা খাতুন। বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে আইনজীবী হবে। দাঁড়াবে নির্যাতিত মানুষের পাশে। তাই ২০১৪ সালে মাস্টার্স শেষ করে সিরাজগঞ্জের এই মেয়েটি এলএলবি পড়ার জন্যে ঢাকায় এসে একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিল।

সেই শৈশব থেকেই রূপার কষ্টের জীবন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়ানোর টাকা দিয়ে মেয়েটি জুগিয়েছে স্কুল-কলেজে পড়ার খরচ। আইন পড়ার খরচ মেটাতে চাকরিও করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু, স্বপ্নের সাথে তার প্রাণটাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে অত্যন্ত নিষ্ঠুরতার সাথে।

গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাতে টাঙ্গাইলের পঁচিশ মাইল এর কাছে একটি নির্জন জায়গায় রূপার মরদেহ ফেলে দেওয়ার আগে ঘাতকরা তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এর আগে, তিনজন বাস শ্রমিক তাঁকে ধর্ষণ করে। রূপা বগুড়ায় একটি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে সে রাতেই ময়মনসিংহে তাঁর কর্মস্থলে ফিরছিলেন।

ধর্ষণ-হত্যার শিকার মেয়েটির বড় ভাই হাফিজুর রহমান টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বাবা চেয়েছিলেন তাঁর পাঁচ সন্তানের মধ্যে অন্তত একজন আইনজীবী হবে। আমরা তা পারিনি। রূপা সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছিল।”

ঘটনার রাত ১১টায় টাঙ্গাইলের পুলিশ রূপার লাশ উদ্ধার করে এবং গাড়ির চালক হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০), সুপারভাইজার গেন্ডু মিয়া (৫০) এবং তিনজন হেলপার শামীম (৩০), আকরাম (৩৫) এবং জাহাঙ্গীর (২০)-কে গ্রেফতার করে।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আসানবাড়ি গ্রামের জুলহাস প্রামাণিকের মেয়ে রূপা বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করেন এর পরের বছর রাজধানীর আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি ভর্তি হয়েছিল।

হাফিজুর জানান, “রূপা আগামী ডিসেম্বরে এলএলবি ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।”

রূপার মাকে সান্ত্বনা দেওয়া ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই। মার কান্না যে থামছেই না। কী বলে সান্ত্বনা দেওয়া যায় সন্তানহারা এ নারীকে?

কান্না জড়ানো কণ্ঠে মা হাসনাহেনা বলেন, “আমার আর সব সন্তানদের মধ্যে রূপা তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্যে সংগ্রাম করে যাচ্ছিল। এখন সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।”রূপার বাবা গত বছর ক্যানসারে মারা যান।

যেভাবে ঘটলো ঘটনাটি

গত শুক্রবার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে রূপা বগুড়াতে যান। পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যায় সে তাঁর কলেজের বন্ধু আব্দুল বারেকের সঙ্গে ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে চড়ে ময়মনসিংহ আসছিলো। বারেক টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় নেমে যায় রাত ৯টার দিকে।

পুলিশের ভাষ্য, সব যাত্রী নেমে গেলে হেলপার শামীম রূপাকে বাসের পেছনে সিটে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। মেয়েটি তাকে পাঁচ হাজার টাকা ও নিজের ফোন সেটটি দিয়ে দেয়।

শামীম টাকা ও ফোনটি নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে। অন্য দুইজন হেলপার আকরাম এবং জাহাঙ্গীরও রূপাকে ধর্ষণ করে। এসময় হাবিব গাড়ি চালাচ্ছিলো এবং গেন্ডু ঘুমচ্ছিল।

রূপার ছোটভাই কলেজ ছাত্র উজ্জ্বল প্রামাণিক বলেন, বাসে উঠার আগে তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, “আমি তাকে রাতের বেলায় এতো লম্বা জার্নি না করতে অনুরোধ করে বাড়ি আসতে বলেছিলাম। কিন্তু সে বলে, যদি কালকে সময় মতো অফিসে যেতে না পারে তাহলে সমস্যা হবে।”

রূপার বোন পপি বলেন, তার বড় বোন চাকরি পাওয়ার পর থেকেই তাদের পরিবারের খরচ যোগাতে সহযোগিতা করতো। আইনজীবী হওয়ার পর সে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন দেখতো। “কিন্তু, হত্যাকারীরা আমার বোনের জীবন কেড়ে নিলো।”

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago