স্যামসাং জে৭ প্রাইম-এর আদ্যোপান্ত
বেশ কয়েক দিক থেকে চমক দেখিয়েছে স্যামসাং গ্যালাক্সি জে৭ প্রাইম। চমৎকার এই স্মার্ট ফোনটির দাম তুলনামূলকভাবে কম বলেই মনে হবে। এর ডিসপ্লের ওপরের কাঁচটি ধার দিয়ে সামান্য বাঁকানো আর পেছনে প্যানেলটি ধাতব তৈরি। প্রথম দেখায়ে একে গ্যালাক্সি এস৭ ও হেডফোন জ্যাকসহ আইফোনের সংমিশ্রণ বলে মনে হতে পারে।
প্রথম অনুভূতি
ফোনের পেছনের অংশটিতে গাঢ় নীল রঙের একটি হালকা আভা রয়েছে। এর ডিসপ্লের আকার সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি হলেও অনায়াসে হাতে নেওয়া যায় ফোনটি। হাতে নেওয়ার পর আকারের চেয়ে একে একটু ছোট বলেই মনে হয়।
একটু অস্বাভাবিক লাগলেও ফোনটির ডান পাশে ওপরের দিকে স্পিকার গ্রিলের অবস্থান। একে একটু অস্বাভাবিক লাগলেও অবিবেচনাপ্রসূত বলা যাবে না। বাস স্ট্যান্ড বা কনসার্টের মতো ভিড়ের জায়গাগুলোতে লাউড স্পিকার ব্যবহারে বাড়তি সুবিধা দিবে এই ডিজাইন।
জে৭ প্রাইম-এর পেছনের অংশটির বেশির ভাগটাই ধাতু দিয়ে তৈরি। তবে ওপরে ও নিচের দিকে রয়েছে কালার কোডেড প্লাস্টিক। আশা করা যায় ফোনের পেছনের দিকটাতে খুব একটা বেশি দাগ পড়বে না। আমাদের টেস্ট ইউনিটটি আশ্চর্যজনকভাবে এরকম বেশ কিছু আঘাত সহ্য করতে পেরেছে।
ফোনটির সামনের হোম বাটনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি খুব দ্রুত কাজ করে। এতে দুবার চাপ দিয়ে মাত্র দেড় সেকেন্ডের মধ্যে ক্যামেরা চালু করা যায়।
ডিসপ্লে
সাড়ে পাঁচ ইঞ্চির ফুল এইচডি ডিসপ্লেটির পিক্সেল ঘনত্ব প্রতি ইঞ্চিতে ৪০১। কাগজে কলমে এর টিএফটি ডিসপ্লে খুব আকর্ষণীয় মনে না হলেও প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও চমৎকার রঙ দেখাতে সক্ষম এই ডিসপ্লেটি যে কোন টেক্সট পড়ার জন্যও আদর্শ।
হার্ডওয়্যার
প্রসেসর হিসেবে এতে রয়েছে স্যামসাংয়ের নিজস্ব তৈরি ১.৬ গিগাহার্জের এক্সিনোস ৭৮৭০। এর সঙ্গে রয়েছে ৩জিবি র্যাম। ফলে প্লে স্টোরের বড় গেমগুলোও অনায়াসে সামলে নিতে পারে এটি। মাত্র ১৬ গিগাবাইট বিল্ট ইন স্টোরেজ থাকলেও মাইক্রো এসডি কার্ডের মাধ্যমে একে ২৫৬ গিগাবাইট পর্যন্ত মেমোরি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
এনটুটু বেঞ্চমার্কে এটি ৪৫,৭৫৬ ও কোয়াড্রান্ট-এ ২৪,০১১ স্কোর করেছে যা নেক্সাস পি৬ এর কাছাকাছি।
সফটওয়্যার
জে৭ প্রাইম-এ রয়েছে অ্যানড্রয়েড ৬.০ মার্শম্যালো ও স্যামসাংয়ের নিজস্ব টাচউইজ ইউআই। আগে এতে প্রচুর অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে টাচউইজ থেকে এ ধরনের বেশ কিছু অ্যাপ বাদ দিয়েছে স্যামসাং। ফোনের সফটওয়্যার যেভাবে সাজানো তাতে মাইক্রোসফটের বিভিন্ন অ্যাপ ও স্কাইপকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে স্যামসাং তাদের নিজস্ব অ্যাপ এস-হেলথ ও এস-প্ল্যানার রেখেছে। ভারতের বাজারের জন্য বানানো সংস্করণটিতে এস-বাইক মোড বলে বিশেষ একটি মোড সংযোজন করেছে স্যামসাং যা বাইকারদের নির্বিঘ্নে বাইক চালাতে সাহায্য করবে। বাইক চালানোর সময় এই মোড সব ধরনের কল ও হেডফোনের সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে শুধুমাত্র বাইক থামানোর পরই কল রিসিভ করা যায়।
বিশেষ ফিচার
নিরাপত্তার জন্য এতে রয়েছে সিকিউর ফোল্ডার অপশন। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আনলক করে বিশেষ কিছু ফাইল ও অ্যাপ ব্যবহার করার সুযোগ থাকছে। ফলে অফিসের সহকর্মী বা অন্য কারও হতে ফোন গেলেও ব্যক্তিগত কোন ছবি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে না।
কানেকটিভিটি
প্রায় সব ধরনের কানেকটিভিটি সুবিধা রয়েছে স্যামসাং জে৭ প্রাইম-এ। এতে জিপিআরএস/ইডিজিই, ৩জি, ওয়াই-ফাই ৮০২.১১বি/জি/এন/এসি, জিপিএস/এ-জিপিএস, ব্লুটুথ ও গ্লোনাস রয়েছে। এর দুটি ন্যানো সিম দিয়ে একই সঙ্গে ৪জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যায়।
ব্যাটারি
গ্যালাক্সি জে৭ প্রাইমে রয়েছে ৩৩০০এমএএইচ ব্যাটারি। তবে ফোন থেকে এর ব্যাটারি খোলা যায় না। প্রায় সারা দিন ব্যবহারের জন্য এই ব্যাটারি যথেষ্ট। তবে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করলে এর এক চার্জেই একদিন পার হয়ে যায়।
ক্যামেরা
ফোনটির পেছনে এফ/১.৯ অ্যাপারচারের ১৩ মেগাপিক্সেল অটোফোকাস ক্যামেরা সঙ্গে রয়েছে এলইডি ফ্লাশ। এটি দিয়ে দিনের উজ্জ্বল আলোয় বেশ চমৎকার ছবি তোলা যায়। প্রায় এক সেকেন্ডের মধ্যেই এটি ফোকাস লক করে নিতে পারে। এর কালার রিপ্রেজেন্টেশন অত্যন্ত চমৎকার। তবে এর বেশ কিছু ইফেক্টের কারণে ছবিগুলোকে ‘পেইন্টিং’ এর মতো মনে হতে পারে। তবে ছবি যার ছবি তোলা হচ্ছে তার পেছনে আলো থাকলে সাবজেক্টের কিনার দিয়ে রংধনুর মত সৃষ্টি হতে পারে যা ক্রোমাটিক অ্যাবারেশন নামে পরিচিত।
এর সামনের ক্যামেরাটি একটু হতাশাজনক। ৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাটির অ্যাপারচার ১.৯ হওয়ার কথা থাকলেও কম আলোতে এটি ভালো ছবি তুলতে পারে না। এছাড়া এই ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময় স্ক্রিনে ট্যাপ করে ফোকাস করা যায় না। সেলফি তোলার সময় নড়াচড়া করলে ছবি ঝাপসা হয়ে যায়। তাই আলো কম থাকলে সবচেয়ে ভালো হয় অন্য কেউ যদি পেছনের ক্যামেরা দিয়ে আপনার ছবি তুলে দেয়।
শেষ কথা
দেখতে ও হাতে নিতে চমৎকার অনুভূতি দেয় ফোনটি। এছাড়াও খুব সহজেই পকেটে রাখা যায় এটি। মধ্যম মানের হিসেবে এর হার্ডওয়্যার অত্যন্ত চমৎকার ও দ্রুত গতির। ভালো সেলফি তুলতে না পারলেও প্রয়োজনীয় সব কাজ খুব দ্রুত করা সম্ভব এই ফোন দিয়ে। যারা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্টাইল ও কাজের জন্য ফোন কেনার কথা ভাবছেন এক কথায় বলা যায় এটি তাদের উদ্দেশ্য করেই বানানো।
স্পেকস
ডিসপ্লে: ৫.৫ ইঞ্চি পিএলএস টিএফটি ১০৮০ x ১৯২০ পিক্সেল। (~৪০১ পিপিআই)
সিপিইউ: অক্টা-কোর ১.৬ গিগাহার্জ করটেক্স-এ৫৩
জিপিইউ: মালি- টি৮৩০ এমপি২
ওএস: অ্যানড্রয়েড, ৬.০.১ (মার্শম্যালো)
রম: ১৬ গিগাবাইট
র্যাম: ৩ জিবি
ক্যামেরা: ১৩ মেগাপিক্সেল, এফ/১.৯ + ৮ মেগাপিক্সেল (সামনের)
ব্যাটারি: ৩৩০০ এমএএইচ
সেন্সর: জি-সেন্সর, জাইরোস্কোপ সেন্সর, অ্যাম্বিয়েন্ট লাইট সেন্সর ইত্যাদি
দাম: ২৩,৯০০টাকা
Comments