গরমে শিশুর যত্নে করণীয়

গরমে শিশুর যত্ন
ছবি: সংগৃহীত

প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠছে সবার, ঝুঁকিতে শিশুরাও। মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে নানা রোগে।

গরমে শিশুর যত্ন সম্পর্কে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের নবজাতক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নিশাত জাহান

তীব্র গরমে শিশুর শারীরিক সমস্যা

ডা. নিশাত জাহান বলেন, চলতি বছরে গরমের তাপমাত্রা অনেক তীব্র। অতিরিক্ত গরমে বড়দের সঙ্গেসঙ্গে শিশুরাও বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হচ্ছে। যে কারণে হাসপাতালে আসা শিশু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে প্রায় প্রতিদিনই।

অত্যাধিক গরমের কারণে শিশুদের বেশিরভাগই আক্রান্ত হচ্ছে জ্বরে, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার জ্বরের ধরনও ভিন্ন। সাধারণত শিশুরা যখন একদিনের জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসে বা চিকিৎসকের কাছে যায় তখন জ্বর কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়। এবার দেখা যাচ্ছে ওষুধ দেওয়ার পরেও জ্বর সহজে কমছে না বা ছাড়ছে না।

জ্বরের সঙ্গে শিশুরা ডায়রিয়া, বমি, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। কাশিও দীর্ঘদিন স্থায়ী হচ্ছে, ওষুধ দেওয়ার পরেও কাশি ১৫ থেকে ১ মাস থাকছে। তীব্র গরমের কারণে পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হতে পারে, এ ছাড়া হিট স্ট্রোকেও আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। যা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তীব্র গরমে শিশুর যত্নে করণীয়

ডা. নিশাত জাহান বলেন, তীব্র গরমে শিশুরা যাতে অসুস্থ হয়ে না পরে সেজন্য বাবা-মা, অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। এসময় শিশুদের কিছু বাড়তি যত্ন নিতে হবে। যেমন-

১. অতিরিক্ত গরমে শিশুরা যাতে বাইরে না যায়, রোদে খেলাধূলা না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ঘরে বসে, ছায়ায় খেলতে পারে। সবসময় ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে শিশুদের।

২. ঘরের ভেতরে থাকলেও খেয়াল রাখতে হবে শিশুরা যাতে ঘেমে না যায়। বারবার ঘাম মুছে দিতে হবে, ঘামে পোশাক ভিজে গেলে তা পাল্টে দিতে হবে। কারণ ঘাম যদি শরীরেই শুকিয়ে যায় সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, ঘাম থেকে জ্বর ও কাশি হতে পারে।

৩. গরমে শিশুকে আরামদায়ক, সুতির, হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরাতে হবে। যার ভেতর দিয়ে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে।

৪. শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে। পানিযুক্ত বিভিন্ন ফল, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের রস, তরল জাতীয় খাবার বেশি দিতে হবে। যাতে কোনোভাবেই শিশুর দেহে পানিশূন্যতা না হয় গরমের জন্য।

৫. তীব্র গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা ভালো থাকে না। গন্ধ হয়ে যাওয়া, অনেকক্ষণ বাইরে পড়ে থাকা খাবার শিশুদের দেওয়া যাবে না। কারণ সেই খাবার খেলে শিশুদের ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড দেওয়া যাবে না। শিশুদের সবসময় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, সতেজ ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়াতে হবে।

৬. প্রতিদিন খাবারের সময়ের বাইরেও যাতে শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

৭.  শিশুদের নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গরমে ঘেমে গেলে দ্বিতীয় বার গোসল করানো যেতে পারে। এ ছাড়া মাঝে মাঝে হাত মুখ ধুইয়ে দিতে হবে, শরীর মুছে দিতে হবে।

৮. গরমে শিশুর ত্বকের বাড়তি যত্নে নজর দিতে হবে। গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরের লোমকূপ বন্ধ হয়ে ত্বকে র‍্যাশ, ঘামাচি, ফুসকুড়ি হতে পারে। তাই শিশুদের সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ধূলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে।

৯. শিশুদের ত্বক অত্যন্ত নরম থাকে। এজন্য সহজেই সানবার্ন হতে পারে, তাই রোদে গেলে অবশ্যই শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তীব্র গরমে একদম খোলা শরীরে বাইরে যাওয়া যাবে না। ছাতা দিয়ে বা কাপড় দিয়ে ঢেকে নিতে হবে শিশুকে, চলাচলে ছায়াযুক্ত স্থান ব্যবহার করতে হবে। বিনা কারণে শিশুদের বাইরে না নেওয়াই ভালো।

১০. গরম থেকে বাঁচতে বাসার এসি খুব ঠান্ডা করে না রাখাই ভালো। খুব বেশি ঠান্ডা হয়ে গেলে শিশুর জন্য অসুবিধার কারণও হতে পারে। ফ্যান বা এসির তাপমাত্রা শিশুর জন্য আরাম ও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

1h ago