“এখনো যথেষ্ট পরিণত নয় যে সবকিছু দ্রুত শিখে নিবে”
সোমবারে দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দলের নয় উইকেটে পরাজয়ের পর মঙ্গলবারটা দলের সদস্যদের জন্য একটা অনির্ধারিত ছুটি হিসেবে উপস্থিত হয়। তবে সেদিন সকালে অনেক মিটিং করতে হয়েছিল দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। সংবাদ সম্মেলনের আগে তাকে কোচিং টিমের সদস্য এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠকে বসতে হয়। তাই নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পর শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন।
শর্ট-স্লিভ টি-শার্ট পরে হাজির হোন হাথুরুসিংহে। দলের মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমামের সঙ্গে একটু কথাও বলে নেন তার ইনফরমাল পোশাকের বিষয়ে। এদিকে হোটেল রঁদেভ্যু ক্রাইস্টচার্চের লবির বাইরে অপেক্ষায় সাংবাদিকরা।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে কথোপোকথনটি নিচে দেওয়া হলো:
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের নিউজিল্যান্ড সফর শেষ হলো। সিরিজের সবকটি ম্যাচেই পরাজিত হয়েছে সফরকারীরা। খেলোয়াড়দের এমন খেলা ও ম্যাচের ফলাফল কি খুব হতাশাজনক নয়?
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে: ফলাফল হতাশাব্যঞ্জক ছিল। আমরা একটি ম্যাচেও জয় আনতে পারিনি। জয়ের জন্য যেমন খেলার প্রয়োজন আমরা তেমন খেলতে পারিনি। কিন্তু তারপরও এই সিরিজে কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে।
প্রশ্ন: সেই ইতিবাচক দিকগুলো কি?
হাথুরুসিংহে: ইতিবাচক দিকটি হলো যে আমরা প্রতিযোগিতায় ছিলাম। প্রতিটি খেলায় আমাদের জয়ের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু আমরা সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। এই বিষয়টাই হতাশার জন্ম দিয়েছে। এমন বৈরি আবহাওয়ায় দল সাধারণত খেলতে অভ্যস্ত নয়, তবুও তারা জেতার পর্যায়ে এসেছিল, এটাই ইতিবাচক দিক।
প্রশ্ন: গতকাল দলের অধিনায়ক পরাজয়ের দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়েছেন। আপনি বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন?
হাথুরুসিংহে: আমার মতে, যদি কেউ দায় স্বীকার করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে একটা ভালো কিছু শুরু হতে যাচ্ছে। আর এর দ্বিতীয় দিকটি হলো যে এ বিষয়ে তাদের কিছু করা প্রয়োজন। যদি তারা পরাজয়ের দায় নেয় তাহলে তো খুবই ভালো।
প্রশ্ন: এই সফরটা ছিল সুযোগ হারানোর সফর, আপনার কি মনে হয়?
হাথুরুসিংহে: সত্যি বলতে কি, খুবই হতাশাজনক ছিল এই সফরটি। যদি তারা খারাপ খেলতো অথবা যদি আমি মনে করতাম যে তারা এর কৌশল বা জ্ঞান রাখে না তাহলে সেটা হতো হতাশাজনক। কিন্তু তাদের জয়ের সুযোগ রয়েছে জানার পরও এবং তাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তারা তা অর্জন করতে পারেনি, সেটাই সবচেয়ে হতাশাজনক।
প্রশ্ন: তাহলে আপনার কি মনে হয় এটা একটা মানসিক বিষয়?
হাথুরুসিংহে: আমি মনে করি, মানসিক সমস্যাটা অন্যতম। এ বিষয় নিয়ে আমরা কথাও বলেছি। এছাড়াও, আরও অনেক কারণ রয়েছে।
প্রশ্ন: দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
হাথুরুসিংহে: আমি আগেই বলেছি এটা খুবই হতাশাজনক সিরিজ ছিল। শুধু ক্রাইস্টচার্চে নয় ওয়েলিংটনের ম্যাচগুলোতেও তারা খারাপ খেলা খেলেছে। আমরা হয়তো মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী নই, অথবা হতে পারে পাঁচদিনের উচ্চমার্গের ক্রিকেট খেলার যথেষ্ট শক্তি আমাদের রয়েছে। সে যাই হোক, গত ইনিংসে নিউজিল্যান্ড সম্ভবত তাদের সেরা খেলাটাই উপহার দিয়েছে। ক্রাইস্টচার্চে তারা সত্যিই খুব ভালো বল করেছিল। কিন্তু এমন কোন অজুহাত দেখানো ঠিক না। আমাদের প্রতি সবার অনেক আশা থাকে। দল বা খেলোয়াড়দেরও অনেক প্রত্যাশা থাকে।
প্রশ্ন: সামনে তো আরও অনেক সিরিজ রয়েছে, তাহলে খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কি হবে?
হাথুরুসিংহে: এক নম্বর পরামর্শ হলো, তারা এখন দায়ভার নিতে শুরু করেছে। এটা একটা খুবই ভালো দিক। আপনারা জানেন যে দলের সদস্যরা এমন একটা সফর অনেকদিন পর পেয়েছে। এ থেকে আমরা শিক্ষা নিচ্ছি। এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভুলগুলো শুধরে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি প্রথম টেস্ট খেলা শেষে বলেছিলেন ভুলগুলো নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। সেগুলো শুধরে নেওয়া হবে। কিন্তু দেখা গেছে তারা ভুলগুলো থেকে কোন শিক্ষা নেয়নি।
হাথুরুসিংহে: আমাদের তিনজন প্রধান খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম, ইমরুল কায়েস ও মমিনুল হক ইনজুরির কারণে খেলতে পারেনি। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দলের ৫০০ রানের জন্য মমিনুল হককে অনেক কৃতিত্ব দেওয়া যায়। টেস্ট ক্রিকেটে অনেক কঠিন অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আবহাওয়াগত দিক থেকে যেমন সমস্যা ছিল তেমনি মানসিক সমস্যাও ছিল। আমি বলবো না যে আমরা এমন একটা পরিণত অবস্থার দিকে পৌঁছে গেছি যে একটি-দুটি প্র্যাকটিস সেশন বা একটু আলোচনাতেই সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তারা এখনো যথেষ্ট পরিণত নয় যে সবকিছু দ্রুত শিখে নিবে।
প্রশ্ন: কিন্তু এমন একজন খেলোয়াড় যিনি ৪৫তম টেস্ট ম্যাচ খেলছেন তিনি একই ভুল বারবার করেন কিভাবে?
হাথুরুসিংহে: খুবই ভালো প্রশ্ন। আমার দৃষ্টিতে অভিজ্ঞতা ম্যাচের সংখ্যা দিয়ে বা কত বছর থেকে খেলছে সেটার ওপরও নির্ভর করে না। অভিজ্ঞতা নির্ভর করে কত দ্রুত একজন শিখে নিতে পারছেন। এটাই একজন খেলোয়াড় ও দলকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দল সিরিজে অনেকগুলো ক্যাচ ফেলে দিয়েছে। হেরে যাওয়ার পেছনে এগুলোকে কি দায়ী করা যায়?
হাথুরুসিংহে: আসলে আমরা যখন দেশের মাটিতে খেলি তখন সুযোগগুলো কাজে লাগানোর মতো দক্ষতা আমাদের রয়েছে। আমরা আমাদের পরিচিত আবহাওয়ার মধ্যে খেলি। নিউজিল্যান্ডে শুধুমাত্র ফিল্ডিংয়ের জন্য আমরা হেরেছি তা বলবো না। তবে ফিল্ডিংয়ের কারণে তরুণ বোলারদের বোলিং প্রচেষ্টা মার খেয়েছে।
প্রশ্ন: মুস্তাফিজুর রহমানের শারীরিক অবস্থা কেমন?
হাথুরুসিংহে: ডাক্তারদের দৃষ্টিতে মুস্তাফিজ ভালো আছেন। সে ধীরে ধীরে খেলায় ফিরছে। ইনজুরির কারণে সে প্রায় সাত মাস মাঠের বাইরে রয়েছে।
প্রশ্ন: সামনে আরও অনেক ক্রিকেট সিরিজ রয়েছে। এ অবস্থায় অন্যান্য খেলোয়াড়দের শারীরিক অবস্থা কেমন?
হাথুরুসিংহে: হ্যাঁ, এটা শারীরিকভাবে অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। একদিকে আমরা যেমন খুব বেশি টেস্ট খেলি না অন্যদিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে বিরতিহীনভাবে খেলতে হয়। ফলে খেলোয়াড়রা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন। আগামী চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রশিক্ষণ শুরুর আগে তাদেরকে যতটা সম্ভব বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের হিসেবে কোন কোন খেলোয়াড়কে দীর্ঘসময় বিশ্রাম দেওয়া দরকার।
Comments