ইউক্রেন থেকে সমুদ্রপথে গম রপ্তানিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে রাশিয়া

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর বৈঠকে ইউক্রেন থেকে গম রপ্তানি বিষয়ে আলোচনা হয়। ছবি: রয়টার্স
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর বৈঠকে ইউক্রেন থেকে গম রপ্তানি বিষয়ে আলোচনা হয়। ছবি: রয়টার্স

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক বৈঠকের পর জানান, বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনীয় গম রপ্তানির জন্য সমুদ্রপথে একটি বাণিজ্য রুট চালুর বিষয়ে রাশিয়া সম্মত হয়েছে।

জাপান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদন মতে, গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ২ দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের পর ক্রেমলিনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উইদোদো বলেন, 'আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রশংসা করি।'

'পুতিন জানিয়েছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া, উভয় দেশ থেকেই খাদ্য ও সার সরবরাহের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবেন। এটি নিঃসন্দেহে ভালো খবর', যোগ করেন উইদোদো।

উইদোদো আরও জানান, তিনি বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আবারও খাদ্য ও সারের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগকে সমর্থন করেন। এই উদ্যোগের মধ্যে আছে কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্যের রপ্তানির পরিকল্পনা।

উইদোদো জানান, খাদ্য ও সার হচ্ছে মানবতার সঙ্গে জড়িত বিষয়। খাদ্য ও সারের সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন ঘটায় লাখো মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে; বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।'

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, 'আমরা ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের কৃষিপণ্য উৎপাদকদের জন্য নাইট্রোজেন, ফসফেট, পটাশ সার ও উৎপাদনে প্রয়োজন হয় এরকম কাঁচামালের পূর্ণ চাহিদা মেটাতে পুরোপুরি প্রস্তুত।'

ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ফলে ইউক্রেন থেকে সমুদ্রপথে পণ্য রপ্তানি বিঘ্নিত হয়েছে। রাশিয়ার এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য ইউক্রেনের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করা। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গমের মত খাদ্য উপাদানের রপ্তানিও থমকে আছে, যার প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বে। 

উল্লেখ্য, ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ।

তবে পুতিনের দাবি, পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত বিধিনিষেধের কারণেই মূলত এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়া দাবি করে, তারা স্নেক আইল্যান্ড থেকে 'স্বদিচ্ছার নিদর্শন'' হিসেবে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং এতে প্রমাণ হয়, ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি করার জন্য জাতিসংঘ যে মানবতার করিডোর তৈরির চেষ্টা করছে, তাতে রাশিয়া কোনোরকম বাঁধা দিচ্ছে না।

তবে ইউক্রেনের দাবি, তারা কামান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে সেখান থেকে রুশ বাহিনীকে সরে যেতে বাধ্য করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একে 'কৌশলগত বিজয়' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

জি২০ জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান উইদোদো জানিয়েছিলেন, তিনি বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কট নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী।

খাদ্যশস্য রপ্তানির দিক দিয়ে এই ২টি দেশ বিশ্বে শীর্ষ স্থানগুলোর মধ্যে আছে। রাশিয়া সার রপ্তানিকারকদের তালিকাতেও ওপরের দিকে আছে।

উইদোদো গত সোমবার জি৭ সম্মেলনে সতর্ক করেন, সারের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে উন্নয়নশীল দেশের ২০০ কোটি মানুষ চাল সঙ্কটে ভুগবে। তিনি উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে সকল বিধিনিষেধ থেকে সার ও খাদ্যকে বাইরে রাখার আহ্বান জানান।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে পুতিন 'বৈশ্বিক বাজার থেকে খাদ্য কেড়ে নেওয়া' এবং খাবারের দাম বাড়ার জন্য পশ্চিমা শক্তিদের আরোপ করা বিধিনিষেধকে দায়ী করেন।

তিনি দাবি করেন, 'যেসব প্রতিষ্ঠান সার উৎপাদন করে, তাদের মালিক এবং এমন কী, তাদের পরিবারের সদস্যরাও বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছেন। ফলে যেকোনো ধরনের চুক্তি সাক্ষর করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে।'

'পশ্চিমা দেশগুলো এমন এক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যে বৈদেশিক বাজারে রুশ খাদ্য ও সার সরবরাহ করা বেশ জটিল হয়ে গেছে', যোগ করেন পুতিন।

পুতিন আরও জানান, রাশিয়া যেকোনো বন্ধুভাবাপন্ন দেশকে সার সরবরাহ করতে প্রস্তুত।

উইদোদো জানান, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ নেতা পুতিনের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে তাদের মধ্যে 'সেতুবন্ধন' তৈরি করতে আগ্রহী।

তিনি জানান, ইন্দোনেশিয়া রাশিয়ার সঙ্গে বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও পর্যটন খাতে অংশীদারিত্ব বজায় রাখবে।

'ইন্দোনেশিয়া চায় এই যুদ্ধ এখুনি বন্ধ হোক এবং খাদ্য, সার ও জ্বালানীর সাপ্লাই চেনের সমস্যাগুলো দ্রুত দূর হোক', যোগ করেন উইদোদো।

উইদোদো জানান, তিনি পুতিনকে নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জি২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি জেলেনস্কিকেও এ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

জেলেনস্কি ভার্চুয়ালি যোগ দিতে রাজি হলেও পুতিন এখনও জানাননি তিনি যোগ দেবেন কী না।

ইতোমধ্যে কিছু পশ্চিমা নেতা এই সম্মেলন বর্জন করার হুমকি দিয়েছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Rubber imports rose 33% last fiscal year

Bangladesh’s rubber imports surged by 33 percent year-on-year in the fiscal year 2024-25 (FY25), as local industries faced shortages due to supply disruptions from domestic producers.

13h ago