৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রী

ইমরান খান। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

পাকিস্তানের রাজনীতির গতিপথ অনুমান করা কঠিন। এ কারণেই হয়তো দেশটির ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী তাদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ১৯৪৭ সাল থেকে প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী যদি তার ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারতেন তাহলে ইমরান খান পাকিস্তানের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হতেন। কিন্তু, ইমরান খান ছিলেন দেশটির ২২তম প্রধানমন্ত্রী। তার একমাত্র কারণ নির্ধারিত মেয়াদের আগেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের নানা কারণে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছে।

লিয়াকত আলী খান: ৪ বছর

পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নির্বাচিত হন। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডিতে আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন। মৃত্যুর আগে ৪ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

খাজা নাজিমুদ্দিন: ২ বছরের কম

লিয়াকত আলী খান নিহত হওয়ার একদিন পর ১৯৫১ সালের ১৭ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণ করেন খাজা নাজিমুদ্দিন। কিন্তু, ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর দাঙ্গার কারণে নাজিমুদ্দিনকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন তৎকালীন গভর্নর জেনারেল গোলাম মুহাম্মদ। কিন্তু, তিনি সেই নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল নাজিমুদ্দিনকে গভর্নর জেনারেল প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন।

মোহাম্মদ আলী বগুড়া: ২ বছর

১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী বগুড়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু, ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট আঞ্চলিক ইস্যুতে দ্বন্দ্ব এবং পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার না থাকায় ভারপ্রাপ্ত গভর্নর-জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা তাকে সরিয়ে দেন।

চৌধুরী মোহাম্মদ আলী: ১ বছর

চৌধুরী মোহাম্মদ আলীকে ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট পাকিস্তানের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন ভারপ্রাপ্ত গভর্নর-জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য পাকিস্তানে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর নাম এখনো উচ্চারিত হয়। কিন্তু, ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দলের সদস্যদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে এবং আইয়ুব খানের একনায়কতন্ত্র নিয়ে স্পষ্টবাদী হওয়ার কারণে চাপের মুখে পড়েন তিনি। এরপর তিনি পদত্যাগ করেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী: ১ বছর

প্রগতিশীল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। কিন্তু, ইস্কান্দার মির্জার সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি পদত্যাগ করেন।

ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগার: ২ মাস

ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগার ১৯৫৭ সালের ১৭ অক্টোবর ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র ২ মাস।

ফিরোজ খান নুন: ১ বছরের কম

১৯৫৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ফিরোজ খান নুনকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে উন্নীত করেন ইস্কান্দার মির্জা। কিন্তু, ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন জারির সময় নুনকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করেন।

নুরুল আমিন: ১৩ দিন

দীর্ঘ ১৩ বছর সামরিক আইন জারির পর স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের প্রশাসনের অধীনে নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। দায়িত্ব পালনের ১৩ দিনের মাথায় ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর আমিনকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

জুলফিকার আলী ভুট্টো

জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৩ সালের ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ১৯৭৭ সালে পুনরায় সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন। কিন্তু, স্বৈরশাসক জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া উল হক তাকে কারাবন্দী করেন। ১৯৭৯ সালে ভুট্টোর ফাঁসি হয়।

মুহাম্মদ খান জুনেজো: ৩ বছর

মুহাম্মদ খান জুনেজো ১৯৮৫ সালের ২৩ মার্চ সামরিক একনায়কতন্ত্রের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে, ১৯৮৮ সালের ২৯ মে জুনেজোর সরকার বরখাস্ত করা হয়।

বেনজির ভুট্টো: ২ বছর

পাকিস্তানে জেনারেল জিয়া-উল-হকের বছরের পর বছর সামরিক শাসনের পর বেনজির ভুট্টো ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তার দল অভিশংসন থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু, তার সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি এবং ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি গুলাম ইসহাক খান তাকে সরিয়ে দেন।

নওয়াজ শরীফ: ৩ বছরের কম

নওয়াজ শরীফ ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু, ১৯৯৩ সালে আবারও রাষ্ট্রপতি গুলাম ইসহাক খান একটি নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট শরীফের সরকারকে পুনর্বহাল করেন। কিন্তু, সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান ওয়াহিদ কাকার ১৯৯৩ সালের ১৮ জুলাই নওয়াজ শরীফ এবং গুলাম ইসহাক খানকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।

বেনজির ভুট্টো: ৩ বছর

বেনজির ভুট্টো ১৯৯৩ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু, এবারও তিনি তার মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। কারণ রাষ্ট্রপতি ফারুক লেঘারি ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে তার সরকারকে বরখাস্ত করেন।

নওয়াজ শরীফ: ২ বছর

নওয়াজ শরীফ ১৯৯৭ সালের নির্বাচনের পর পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন। তবে, তার পূর্বসূরির মতো তিনিও ৫ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর জেনারেল পারভেজ মোশাররফ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং নওয়াজ শরীফকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন।

মীর জাফরুল্লাহ খান জামালি: ১৯ মাস

জাফরুল্লাহ খান জামালি স্বৈরশাসক পারভেজ মোশারফের অধীনে প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু, মোশাররফ তাকে বরখাস্ত করার আগে তিনি মাত্র ১৯ মাস দায়িত্ব পালন করেন।

চৌধুরী সুজাত: ২ মাস

চৌধুরী সুজাত ২০০৪ সালের ৩০ জুন পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন। শওকত আজিজ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন সুজাত।

শওকত আজিজ: ৩ বছর

শওকত আজিজ ২০০৪ সালের ২৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব ত্যাগ করেন।

ইউসুফ রাজা গিলানি: ৪ বছর

ইউসুফ রাজা গিলানি ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর ১৮তম প্রধানমন্ত্রী হন। তার দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন অর্জন করে। কিন্তু, ২০১২ সালে শীর্ষ আদালত অবমাননার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

রাজা পারভেজ আশরাফ: ১ বছরের কম

পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদ শেষ করতে গিলানির কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন রাজা পারভেজ আশরাফ। ২০১২ সালের ২২ জুন থেকে ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

নওয়াজ শরীফ: ৪ বছরের বেশি

নওয়াজ শরীফ ২০১৩ সালের জুনে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন। পাকিস্তানের পূর্ববর্তী সব প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় এখন পর্যন্ত তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক অভিশংসিত হওয়ার আগে তিনি ৪ বছর ৫৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন।

শাহীদ খাকান আব্বাসি: ১ বছরের কম

নওয়াজ শরীফকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে শাহীদ খাকান আব্বাসিকে ২১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু, ২০১৮ সালের ৩১ মে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কারণ নতুন নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়।

ইমরান খান: আগস্ট ১৮, ২০১৮-এপ্রিল ১০, ২০২২

২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইমরান খান। কিন্তু, ইমরান খানও নিজের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারান ইমরান খান।

সূত্র: জিও নিউজ

Comments

The Daily Star  | English
Chattogram port Imports

Reducing penalty on false declarations will encourage smuggling: experts

In the Finance Ordinance 2025–26, presented on Monday, the government proposed amending the Customs Act 2023 and revising the penalty structure for tax evasion related to intentional false declarations during import clearance, reducing the minimum fine from twice the evaded amount to an equivale

1h ago