ডিজিটাল অটোচালক আন্নাদুরাই

ছবি: সংগৃহীত

এই গল্পটা একজন অটোরিকশা চালকের। তবে, সেটি আর দশটা অটোরিকশার চালকের মতো নয়। কারণ এটিকে ভ্রাম্যমাণ পাবলিক লাইব্রেরি বললেও ভুল হবে না। ৩৮ বছর বয়সী এই অটোচালক হলেন ভারতীয় নাগরিক আন্নাদুরাই। তিনি চেন্নাইয়ে অটোরিকশা চালান। ভালোবেসে অটোরিকশাটির নাম দিয়েছেন 'অ্যামেজিং অটো'।

চেন্নাইয়ের যেসব মানুষ একবারের জন্যে হলেও তার অটোতে চড়েছেন তারা অবাক হয়েছেন, মুগ্ধ হয়েছেন। তারা বারবার আন্নাদুরাইয়ের অটোর যাত্রী হয়েছেন।

সাধারণত অটোরিকশাতে ভাড়া নিয়ে অটোচালক এবং যাত্রীর মধ্যে প্রায়ই চিৎকার-চেচামেচি হয়ে থাকে। তবে, আন্নাদুরাই একদম বিপরীত। তিনি সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে এক টাকাও অতিরিক্ত নেন না এবং সবসময় মিটার ব্যবহার করেন।

আন্নাদুরাই বলেন, হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে আমি একজন অটোচালক হয়ে উঠেছি এবং এখন ১২ বছর ধরে এই পেশায় আছি।

তিনি তার অটোটির নাম দিয়েছেন 'অ্যামেজিং অটো'। যাত্রীদের জন্য অটোতে ধাপে ধাপে সাজানো আছে ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র। অটোতে ১০টি দৈনিক এবং ৪০টি ম্যাগাজিন রাখেন তিনি।

আরও অবাক করা ব্যাপার হলো- অ্যামেজিং অটোর যাত্রীরা একটি আইপ্যাড প্রো, একটি ল্যাপটপ, একটি ট্যাব, অ্যামাজন এডাব্লুউএস এবং গুগল নেস্টের অ্যাক্সেস পান। চাইলেই যাত্রীরা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ভাড়া দিতে পারেন। আন্নার অটোতে সেই ব্যবস্থাও আছে।

ছবি: সংগৃহীত

এছাড়াও, আন্নাদুরাই যাত্রীদের জন্য একটি কাঠের ঝুড়িতে চকলেটের ব্যবস্থা রেখেছেন। এরসঙ্গে একটি মিনি কুলার বক্সের ভিতরে কোমল পানীয়র ব্যবস্থা আছে।

আন্নাদুরাই বলেন, আমার কাছে গ্রাহকরাই সবকিছু। প্রাথমিকভাবে আমি তাদের সংবাদপত্র সরবরাহ শুরু করি এবং তাদের প্রশংসা আমাকে আরও আগ্রহী করে তোলে। আমি বুঝতে পারি কোনো গ্রাহককে খুশি করতে পারলে তারা কখনোই আমাকে ভুলে যাবে না। তারপর থেকে আমি সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে শুরু করি।

শুধু অটো চালিয়েই আন্নাদুরাই চেন্নাইয়ের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। দেশ থেকে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তার খ্যাতি। তার সুন্দর আচরণ, নম্র মনোভাব এবং নীতি তাকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু কলেজ এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়েছেন।

তবে, এ ধরনের ব্যয়বহুল সুযোগ-সুবিধা এবং উচ্চগতির ওয়াইফাই সুবিধার ব্যয় তিনি কীভাবে মেটান এমন এক প্রশ্নের জবাবে আন্নাদুরাই জানান, সাধারণত যারা একবার তার অটোরিকশায় চড়েছে তারা বারবার তাকেই ডেকেছে। এ কারণে অন্য অটোচালকদের তুলনায় তিনি তিনগুণ বেশি আয় করেন।

সম্প্রতি আন্নাদুরাইকে নিয়ে একটি টুইট করেন আনন্দ মাহিন্দ্রা। তারপর থেকে তার গল্পটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ড হতে শুরু করে।

আন্নাদুরাই জানান, আনন্দ মাহিন্দ্রার টুইট তাকে অভিভূত করেছে এবং তিনি বেশ অবাকও হয়েছেন। তিনি ৩ জনকে নিজের জীবনের আইডল মনে করেন। তাদের একজন আনন্দ মাহিন্দ্রা। অপর দু'জন হলেন- রতন টাটা এবং আজিম প্রেমজি।

আর এখন দ্বাদশ শ্রেণির এই ড্রপআউট অনেকের আইডল হয়ে উঠেছেন। ফেসবুকে তার হাজার হাজার অনুসারী আছে। এ পর্যন্ত তিনি অর্ধশতাধিক করপোরেট অফিসে বক্তৃতা দিয়েছেন।

২০১০ সালে জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে আন্নাদুরাইয়ের 'অ্যামেজিং অটো' নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা এখন বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ছড়িয়েছে। তার একটি ওয়েবসাইট এবং একটি অ্যাপও আছে।

ছবি: সংগৃহীত

'অ্যামেজিং অটো'র অগ্রিম বুকিং ব্যবস্থা চালু আছে। মাঝে মাঝে চার মাস আগে অগ্রিম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে হয়।

তিনি আয়ের একটি অংশ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য দান করেন। এছড়া বিশেষ দিনগুলোতে বিনামূল্যে বা ছাড়যুক্ত রাইডের ব্যবস্থা রাখেন। আন্নাদুরাই শিক্ষকদের প্রতিদিন বিনামূল্যে এবং মা দিবসে শিশুদের সঙ্গে ভ্রমণকারী নারীদের বিনামূল্যে অটো চড়ার সুযোগ দেন।

যাত্রীদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন তিনি। একজনকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং যারা সঠিক উত্তর দিতে পারেন তাদের মধ্যে একজন ভাগ্যবান বিজয়ী এক হাজার ‍রুপি পুরস্কার পান।

একইভাবে, আন্নাদুরাইয়ের অটোতে চড়া প্রত্যেককে একটি টোকেন দেওয়া হয়। কেউ যদি ২০টি টোকেন সংগ্রহ করেন তাহলে তিনি ২৫০ রুপি পান এবং ৩০টি টোকেন সংগ্রহ করলে তিনি পান ৫০০ রুপি।

আন্নাদুরাইকে সবাই 'অটো আন্না' বলে ডাকেন। তার একটি বৃদ্ধাশ্রম খোলার পরিকল্পনা করছেন।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, দ্য ট্রিবিউন, দ্য হিন্দু

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

2h ago