মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

অংশীদারিত্বের কারণে বাংলাদেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারি: যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব আছে। সেই অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র অনেক ইস্যু ও পারস্পরিক স্বার্থ উত্থাপন করে এবং উদ্বেগও প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের কাছে নিয়মিত মানবাধিকার বিষয়গুলো উত্থাপন করে এবং বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথোপকথন চালিয়ে যাবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জুন) ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা নেড প্রাইসকে বাংলাদেশ বিষয়ে ২টি প্রশ্ন করেন।

প্রথম প্রশ্নটি ছিল, 'বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জিজ্ঞেস করার জন্য বাংলাদেশি সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্নের একটি তালিকা দিয়েছেন। মোমেন বলেছেন, প্রায় ১ লাখ মার্কিন নাগরিক নিখোঁজ। যুক্তরাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছে। মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনী বছরে ১ হাজারেরও বেশি নাগরিককে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই আফ্রিকান-আমেরিকান ও হিস্পানিক। আমেরিকার তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস নেই। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রুশ গণমাধ্যম আরটি টিভি ব্লক করে দেওয়ারও সমালোচনা করেছেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের বিষয়ে কথা বলার একদিন পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই কথা বলেন। তিনি এটিও বলেছেন, তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?'

জবাবে নেড প্রাইস বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে। সেই অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে আমরা অনেক ইস্যু, অনেক পারস্পরিক স্বার্থ উত্থাপন ও উদ্বেগও প্রকাশ করি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে নিয়মিত মানবাধিকার বিষয়গুলো উত্থাপন করি। আমরা এটি প্রকাশ্যে করি, যেমনটি আমি আগেও করেছি। তবে এটি ব্যক্তিগতভাবেও করি। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা, শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা এবং শরণার্থীদের সুরক্ষার জন্যও আহ্বান জানাই।

আমরা এই অধিকার এবং সুরক্ষা শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা বাংলাদেশকে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছি। শুধু ২০২১ সালেই ইউএসএআইডি খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগ সম্প্রসারিত করতে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নতি ঘটাতে এবং গণতন্ত্র ও সুশাসনের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে—এমন কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের জন্য ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি ডলার দিয়েছে।

তাই আমরা আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে ওই বিষয়ক কথোপকথন চালিয়ে যাব।'

বাংলাদেশ বিষয়ে নেড প্রাইসকে আরও একটি প্রশ্ন করা হয়।

সেটি হলো, 'বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং ক্ষুদ্রঋণের অগ্রদূত-নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মন্তব্যের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ চলছে। শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের তহবিল বন্ধ করতে মার্কিন প্রভাব খাটিয়েছেন, তাই তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত। এমন শাস্তি হওয়া উচিত যে, তিনি তাদের পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ফেলে দিতে চান। দেখুন, তিনি খোলাখুলি মন্তব্য করছেন এবং দেশব্যাপী প্রতিবাদ চলছে। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলা চালিয়েছে। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?'

জবাবে নেড প্রাইস বলেন, 'আমাদের কথা হচ্ছে, সমাবেশের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তির শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকার—এগুলো সর্বজনীন অধিকার। বিশ্বের যে কোনো স্থানের মতো বাংলাদেশের জনগণের জন্যও এটি সমানভাবে প্রযোজ্য। আমরা সারা বিশ্বের সরকারগুলোকে, সিকিউরিটি সার্ভিস, নিরাপত্তা বাহিনী, বেসামরিক বাহিনীকে সেই অধিকারকে সম্মান করার এবং মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে একত্রিত হওয়ার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানাই।'

Comments

The Daily Star  | English
US tariffs impact on Bangladesh economy

Can Bangladesh ride out the wave of US tariffs?

Trump's announcement sent businesses scrambling. Orders froze. Buyers demanded discounts. Stock markets plummeted.

13h ago