কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়া কি আসলেই উপকারী?

ঘি কফি

সম্প্রতি স্বাস্থ্য সচেতনদের মধ্যে কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে পান করা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই বিশেষ পানীয়টি বুলেটপ্রুফ কফি নামেও পরিচিত, যার প্রধান উপকরণ হলো কফি এবং ঘি (বা বাটার)।

এই বুলেটপ্রুফ কফির অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা শোনা যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কি না। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ আঞ্জুমান আরা শিমুল।

বুলেটপ্রুফ কফি হলো কফি, আনসল্টেড বাটার বা ঘি এবং মিডিয়াম-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড (এমসিটি) তেল মিশিয়ে তৈরি একটি উচ্চচর্বিযুক্ত পানীয়। এটি সাধারণত কেটোজেনিক (লো-কার্ব, হাই-ফ্যাট) ডায়েট অনুসরণকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়।

ঘি এবং কফির পুষ্টিগুণ

ঘি

ঘি মূলত পরিষ্কার করা মাখন, যা ক্যালরি ও চর্বি সমৃদ্ধ। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে থাকে।

প্রতি ১ টেবিল চামচ ঘিতে থাকে-

ক্যালরি: ১২০ কিলোক্যালরি

মোট ফ্যাট: ১৪ গ্রাম

স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ৯ গ্রাম

কফি

কফি একটি প্রাকৃতিক উদ্দীপক, যা ক্যাফেইন সমৃদ্ধ। এটি মানসিক সতর্কতা বৃদ্ধি করে, ক্লান্তি দূর করে এবং বিপাক প্রক্রিয়া বাড়াতে সহায়ক।

১ কাপ কালো কফিতে (২৫০ মি.লি.) ক্যাফেইন থাকে প্রায় ৮০-১০০ মিলিগ্রাম।

কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

শক্তি বৃদ্ধি ও মনোযোগ উন্নতি

বুলেটপ্রুফ কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং ঘিতে থাকা মিডিয়াম চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড (এমসিটি) দ্রুত হজম হয়ে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা দীর্ঘ সময় ধরে এনার্জি বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি মেটাবলিজম বাড়িয়ে ক্যালরি পোড়াতে সহায়তা করতে পারে। এটি ফোকাস ও মানসিক স্পষ্টতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

ক্ষুধা কমানো এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ

উচ্চ চর্বি উপাদান থাকার কারণে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূতি দেয় এবং অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে সাহায্য করতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট ধীরে হজম হয়, যা ক্ষুধা দমনে সহায়ক।

কেটোজেনিক (লো-কার্ব) ডায়েটে সহায়ক

ঘি উচ্চ-ফ্যাট এবং কম-কার্বোহাইড্রেটযুক্ত, যা কেটোজেনিক ডায়েট অনুসরণকারীদের জন্য উপকারী। এটি কিটোন উৎপাদন বাড়িয়ে শরীরকে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুবিধা

কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।

রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখা

কার্বোহাইড্রেট কম থাকায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি বা হ্রাস প্রতিরোধ করতে সহায়ক।

সতর্কতা

বুলেটপ্রুফ কফির স্বাস্থ্য উপকারিতা জানার সঙ্গে এটির স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে জানা ও অত্যন্ত প্রয়োজন।

উচ্চ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি

ঘিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি, যা এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল বাড়িয়ে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। নিয়মিত বুলেটপ্রুফ কফি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি

অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ ওজন বাড়াতে পারে। ঘি-কফি যদি নিয়ন্ত্রিতভাবে খাওয়া না হয়, তবে এটি স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।

পরিপাক সংক্রান্ত সমস্যা

কিছু মানুষের জন্য স্যাচুরেটেড ফ্যাট হজম করা কঠিন। যার ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক বা ডায়রিয়া হতে পারে।

পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা

শুধু ঘি-কফি খেলে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের অভাব হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি তৈরি করে।

যাদের জন্য উপকারী হতে পারে

  • যারা কেটোজেনিক বা লো-কার্ব ডায়েট অনুসরণ করেন।
  • সকালের নাশতার বিকল্প খুঁজছেন।
  • যারা শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক কাজ বেশি করেন।

যাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে

  • হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরল রোগীরা।
  • হজম সমস্যা বা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার রোগী।

কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়া কিছু ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি কেটোজেনিক ডায়েট অনুসরণ করেন বা শক্তি বাড়াতে চান। তবে, অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ ও ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অবস্থা ও খাদ্যাভ্যাস বিবেচনায় রেখে পরিমিতভাবে গ্রহণ করা উচিত। ঘি-কফি গ্রহণ করলে নিয়মিত লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করানো উচিত। একজন সুস্থ ব্যাক্তির জন্য ১ কাপ ঘি-কফি (১ টেবিল চামচ ঘি সহ) নিরাপদ হতে পারে। এছাড়া বুলেটপ্রুফ কফি পান করার সাথে স্বাস্থ্য অবস্থা অনুযায়ী সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা জরুরি। অন্যথায় শরীরের ক্ষতি হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Step up diplomacy as US tariff clock ticks away

Bangladesh must intensify trade diplomacy to protect garment exports from steep US tariffs as the clock runs down on a three-month reprieve, business leaders warned yesterday.

10h ago