অচল-পরিত্যক্ত যান মেরামতে খরচ দেখানো হলো প্রায় ২ লাখ টাকা

ট্রাক্টরটি কয়েকবছর ধরে পরিত্যক্ত। ছবি: স্টার

চালকের অভাবে একমাত্র পিকআপটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে গ্যারেজে পড়ে আছে। খাদ্য পরিবহন ও ঘাস চাষে ব্যবহৃত ট্রাক্টরটি কয়েকবছর ধরে পরিত্যক্ত। কেবল একটি পুরাতন মোটরসাইকেল সচল রয়েছে।

অথচ এসব গাড়ির মেরামত ব্যয় দেখিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগার থেকে তুলে নিয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অবস্থিত সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিপশু উন্নয়ন খামার কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, নভেম্বরে একমাত্র মোটরসাইকেলটি মেরামত করা হয়েছিল ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে। ২০২৪ সালের আগস্টে খামারে যোগদানকারী পশু উৎপাদন কর্মকর্তা শুভ কর্মকার এটি ব্যবহার করছেন।

মোটরযান মেরামতের খরচের বিপরীতে গত ২ ও ৪ সেপ্টেম্বর দুটি বিল দাখিল করা হয়েছে। উভয় বিল হাটহাজারীর মা মোটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের। ২৫ হাজার টাকা করে ভাউচার দুটিতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।

চালকের অভাবে পড়ে থাকা পিকআপ। ছবি: স্টার

কিন্তু গ্যারেজের মালিক আবদুর রহিম ২৪ ডিসেম্বর দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি কখনো ডেইরি ফার্মের কোনো গাড়ি মেরামত করেনি এবং তাদের কাছে কোনো সরঞ্জাম বিক্রি করেনি।

আবদুর রহিম বলেন, 'লোকজন যন্ত্রপাতি কেনার পর অনেক সময় খালি মেমো নিয়ে যান। হয়তো কেউ মেমো নিয়ে ইচ্ছে মতো টাকার পরিমাণ বসিয়ে দিয়েছে।'

গত ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে খামারটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, পিকআপটি তালাবদ্ধ গ্যারেজে পড়ে আছে। ব্যবহার না হওয়ায় সেটিতে জমেছে ধুলো-ময়লা। পরিত্যক্ত ট্রাক্টরটি মাঠে পড়ে আছে মাঠে। সেটিরও চাকাগুলো খুলে নেওয়া হয়েছে।

শুধু ভুয়া মেরামত দেখিয়ে টাকা উত্তোলন নয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে যানবাহনগুলো জন্য পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট ক্রয় বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে ২ লাখ টাকার উত্তোলন করেছে খামার কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু এই সময়কালে পিকআপ-ট্রাক্টর একবারের জন্যও চালানো হয়নি। তাছাড়া সচল মোটরসাইকেলটি পশু উৎপাদন কর্মকর্তা শুভ কর্মকার নিজের টাকায় তেল ভরে ব্যবহার করেন।

তিনি বলেন, 'মোটরসাইকেল মেরামত বাবদ আমি ৬ হাজার টাকা পেয়েছি। কিন্তু কোনো তেল খরচ পাইনি।'

খামারে ১৭ জন স্থায়ী কর্মী রয়েছেন, যারা পাঁচটি শেডের অন্তত ২৩৮টি গবাদিপশু দেখভাল করছেন।

কিন্তু, অনিয়মিত শ্রমিকদের বেতনের নামে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে খামার কর্তৃপক্ষ।

কাগজপত্রে চলতি অর্থবছরের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অনিয়মিত শ্রমিকদের বেতন হিসেবে এসব টাকা তোলা হয়েছে।

যদিও স্থায়ী কর্মীদের মধ্যে কমপক্ষে আটজন জানিয়েছেন, তারা এই তিনমাসে খামারে কোনো অনিয়মিত শ্রমিককে কাজ করতে দেখেননি।

খামারের ভারপ্রাপ্ত দুধ রেকর্ডার শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তিনি গত তিন মাসে খামারে কোনো অনিয়মিত কর্মীকে কাজ করতে দেখেননি।

খামারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, এই সরকারি প্রতিষ্ঠানের সব কেনাকাটা তদারকি করেন খামারের উপ-পরিচালক মলয় কান্তি মোদক। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি এই খামারে যোগদান করেছেন।

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে মলয় কান্তি মোদক বলেন, 'কিছু কর্মী আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।'

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) এবিএম খালেদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা মলয় কান্তির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একাধিক অভিযোগ পেয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছি। প্রমাণ পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি দল গত ৬ জানুয়ারি খামারে অভিযান পরিচালনা করেছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদক সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ বলেন, 'আমরা প্রাথমিকভাবে খামারের বিভিন্নখাতে বরাদ্দকৃত তহবিল আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছি। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। তদন্ত শেষ করার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt declares 10-day Eid holiday starting June 5

Offices to remain open on two weekly holidays— May 17 and 24—to offset Eid vacation

1h ago