আবরার হত্যা মামলার ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহতাসিম ফুয়াদ, সাবেক গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, সাবেক আইন বিষয় উপসম্পাদক অমিত সাহা, সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আকাশ হোসেন ও মোয়াজ আবু হুয়ারেরা।

একইসঙ্গে আদালত তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ওরফে শান্ত, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার অপু, সাবেক সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাবেক সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপসম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক মুস্তবা রাফিদ এবং সদস্য মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মুনতাসির আল জেমি এবং ইহতাশামুল রাব্বী তানিম।

এ ছাড়া, ছাত্রলীগ কর্মী খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, এএসএম নাজমুস সাদাত, মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, শামীম বিল্লাহ, মুহাম্মদ মোরশেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এসএম মাহমুদ সেতুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এদের মধ্যে জিসান, তানিম ও মুস্তবা রাফিদ পলাতক।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ২২ আসামিকে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়।

গত ২৮ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে বিচারিক আদালত রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছিলেন।

আদালত বলেছিলেন, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক আরও পর্যবেক্ষণ করা দরকার। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হলো।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালত অভিযোগ গঠন করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তাতে ৬০ জন সাক্ষীর নামে তালিকা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৪৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এজাহারভুক্ত ১৯ জনের পাশাপাশি আরও ৬ জনসহ মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন—বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ওরফে শান্ত, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার অপু, সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপসম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল এবং সদস্য মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মুনতাসির আল জেমি এবং ইহতাশামুল রাব্বী তানিম। ছাত্রলীগ কর্মী খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, এএসএম নাজমুস সাদাত, মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, আকাশ হোসেন, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুয়ারেরা, মুহাম্মদ মোরশেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান এবং মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম। এদের মধ্যে জিসান ও তানিম পলাতক।

বাকি ৬ জন হলেন—বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, আইন বিষয় উপসম্পাদক অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক মুস্তবা রাফিদ, ছাত্রলীগ কর্মী মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এসএম মাহমুদ সেতু। এদের মধ্যে মুস্তবা রাফিদ পলাতক।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২১টি আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা জমা দেন। গ্রেপ্তার ২২ জনের মধ্যে ৮ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান অভিযোগ সংশোধনে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন গ্রহণ করে ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পুনর্গঠন করেন।

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় বুয়েট শাখার ছাত্রলীগের ১৯ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও অনেক জনকে আসামি করা হয়।

প্রতিবাদের মুখে ৭ অক্টোবর সংগঠনের শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক রাসেলসহ বুয়েট শাখার ১১ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। একই অভিযোগে ১৪ অক্টোবর অমিত ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।

১১ অক্টোবর বুয়েট প্রশাসন ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে। ২১ নভেম্বর হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে ২৫ শিক্ষার্থী বুয়েট থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের অধিকাংশই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

Comments

The Daily Star  | English
Govt buckles up

Govt publishes preliminary list of those killed in July-August protests

The interim government today published a preliminary list of 726 people who died during the student-led mass protests in July and August.

42m ago