একটি বই ও রক্তপিপাসুদের হামলা

ছবি: সংগৃহীত

হুমায়ুন আজাদকে হত্যার জন্য নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান নির্দেশ দেন সংগঠনটির সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানিকে।

হুমায়ুন আজাদ 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' বইটি লিখেছিলেন। ধর্মীয় মৌলবাদের সমালোচনা করে লেখা বইটি প্রকাশের পর হুমায়ুন আজাদকে 'মুরতাদ' (ধর্মত্যাগী) ঘোষণা করেন আব্দুর রহমান। সানিকে তিনি নির্দেশ দেন একুশে বইমেলায় হুমায়ুন আজাদের চলাফেরার ওপর নজর রাখতে এবং সুযোগ বুঝে তাকে হত্যা করতে।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা করা হয়। এর ৮ বছর পর ২০১২ সালে আদালতে দাখিল করা চার্জশিট অনুযায়ী, জেএমবি প্রধান সংগঠনটির মজলিশ-ই শুরা (সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণ কমিটি) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে হুমায়ুন আজাদকে হত্যার সিদ্ধান্ত দেন। ওই বছরের আগস্টে জার্মানির মিউনিখে হুমায়ুন আজাদের মৃত্যু হয়।

হত্যার নির্দেশ পেয়ে হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে জানতে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' বইয়ের প্রকাশনী সংস্থা আগামী প্রকাশনীতে যান আতাউর রহমান সানি ও মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার দিন সানি ৫ জনের হামলাকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন। এই দলটি ছুরি ও বোমা নিয়ে রাত ৮টার দিকে বাংলা একাডেমির গেটের বিপরীতে অবস্থান নেয়।

মিনহাজ ও জেএমবির কিলিং স্কোয়াডের সদস্য নুর মোহাম্মদ ওরফে শামীমের কাছে ছিল ছুরি এবং আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগনে শহীদ ও নুরুল্লাহ ওরফে হাফিজ চটের ব্যাগে বোমা বহন করেন।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টায় অধ্যাপক আজাদ যখন বইমেলা থেকে বের হয়ে টিএসসির দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন মিনহাজ ও শামীম নির্বিচারে তার কাঁধ, মাথা, মুখ, গলা, হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে তাকে গুরুতর আহত করেন।

একই সময়ে ভাগনে শহীদ ও নুরুল্লাহ জনমনে আতঙ্ক তৈরিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটান এবং মানুষের ভিড়ের মিশে যান। তারা নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০০৬ সালে জেএমবি প্রধান আব্দুর রহমান ও তার ছোটভাই সানিকে গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে তারা হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার কথা স্বীকার করেন।

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আব্দুর রহমানের ডেপুটি সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, আব্দুর রহমানের জামাতা আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব, খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুক মাস্টারমাইন্ড হিসেবে জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

তবে ২০১২ সালে দাখিল করা চার্জশিটে আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, সানি, আউয়াল ও খালেদ সাইফুল্লাহকে অন্তর্ভুক্ত করেননি তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন পরিদর্শক লুৎফর রহমান। কেননা, ঝালকাঠির ২ বিচারককে হত্যার অপরাধে ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল।

অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া নুরুল্লাহ হাফিজ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হাফেজ মাহমুদের নামও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করেননি তদন্ত কর্মকর্তা।

বর্তমানে চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—সালেহীন, ভাগনে শহীদ, মিনহাজ ও নুর মোহাম্মদ। তাদের মধ্যে সালেহীন ও নূর মোহাম্মদ পলাতক এবং ভাগনে শহীদ ও মিনহাজ কারাগারে আছেন।

জেএমবি ক্যাডাররা দশকব্যাপী গোপন অভিযান চালিয়ে বহু মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করেছে। ২০০৫ সালে জিহাদের ঘোষণা দিয়ে তারা দেশের ৬৩টি জেলায় প্রায় ৫০০ সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।

তাদের হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আছেন বিচারক, আইনজীবী ও পুলিশ সদস্য।

২০০৪ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা ও পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কবল থেকে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোকে মুক্ত করার নামে জেএমবি ও এর শাখা জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরে অন্তত ২২ জনকে হত্যা এবং আরও অনেককে আহত করে।

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

5h ago