গোপনে ভিডিও ধারণ, মামলা তুলে নিতে ভুক্তভোগীকে হুমকি

আজ রোববার বেলা ১১টায় ‘যৌন নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার, ভুক্তভোগীর অধিকার’ এ স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গোপনে ভিডিও ধারণের অভিযোগ তুলেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী। 

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় গত ৬ এপ্রিল খুলনার হরিণটানা থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছেন ওই নারী শিক্ষার্থী। তিনি জানান, মামলার পর থেকে অভিযুক্তের পরিবার বিভিন্নভাবে তার পরিবারের ওপর চাপ দিচ্ছেন, মামলা তুলে নিতে হুমকিও দিচ্ছেন। 

আজ রোববার দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন একটি ভাড়া বাসায় থাকি। গত ২ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে আমি গোসলের জন্য বাথরুমে যাই। কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারি ভেন্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে মোবাইলের আলো আসছে, টের পাই সেখান থেকে কেউ একজন গোপনে ছবি তুলছে, ভিডিও করছে। আমি চিৎকার করে উঠলে সে সেখান থেকে সরে যায়। আমি দ্রুত পোশাক পাল্টে বের হওয়ার চেষ্টা করি। এ সময় লক্ষ্য করি সে আবারও আমার ছবি তোলার চেষ্টা করছে। আমি দ্রুত বাথরুম থেকে বের হয়ে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু সে পালিয়ে যায়।' 

'ঘটনাটি আমার রুমমেটকে জানালে তিনিও একইদিন দুপুর ২টায় গোসলের সময় এমন কিছু টের পাওয়ার কথা বলেন। বন্ধুদের কাছে ঘটনাটি বলার পর তারা আমার বাসার আশেপাশে যতগুলো সিসি ক্যামেরা আছে সবগুলোর ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই করে। ফুটেজগুলো দেখে আমি নিশ্চিত হই যে কেউ একজন গোপনে আমাদের  ছবি তুলছিল। এরপর ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইসলামনগর রোডে আমার কয়েকজন বন্ধু ওই লোকটিকে শনাক্ত করতে পারে। সেসময় তারা আমাকে সেখানে ডাকে। আমি দ্রুত সেখানে যাই। আমরা নিশ্চিত হই যে, ওই ব্যক্তি অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সাবেক  শিক্ষার্থী ,' বলেন তিনি।

ওই নারী শিক্ষার্থী আরও বলেন, 'বন্ধুদের উপস্থিতিতে আমরা সেখানে তার মোবাইল চেক করি। সেখানে আমার বাথরুমের ছবি পাই এবং প্রচুর পর্নোগ্রাফিও দেখতে পাই। তিনি এসময় গোপনে আমার বাথরুমে ভিডিও করার কথা স্বীকার করেন এবং আমার শরীর নিয়েও বাজে মন্তব্য করেন। এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা রেগে গিয়ে তাকে মারধর করে। এসময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক সহকারী সেখানে আসেন এবং তার পরামর্শে অভিযুক্তকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। তাকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়।'

'এ ঘটনায় অভিযোগ দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায় যে, ঘটনাটি ক্যাম্পাস এলাকায় ঘটেনি। অন্যদিকে অভিযুক্ত সাবেক শিক্ষার্থী, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্মাতক পাশ করেছে। সাবেক শিক্ষার্থী হওয়ায় এটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তারা আমাকে মামলা করার পরামর্শ দেয়,' বলেন তিনি।

মামলার পর ওই নারী শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, 'আমার বাবাকে ফোন করে তার ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমার ভাইকেও একইভাবে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়। মামলা করার এক দিন পর, ৭ এপ্রিল আমার ক্যাম্পাসের বাইরের মেইন রোডে কয়েকজন বহিরাগত এসে আমার নাম বলে আমি কোথায় থাকি সেটা খোঁজ করতে থাকে। আমি এ ঘটনাগুলো থানায় জানিয়েছি। আমি সাধারণ ডায়েরি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা বলেছেন, আমার মামলা এখনো কোর্টে ওঠেনি। তাই এখন জিডি করা যাবে না।'

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করেন হরিণটানা থানার ওসি মো. এমদাদুল হক। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভুক্তভোগীর পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা। আমাদের কিছু জানানো হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, '৬ এপ্রিল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় অভিযুক্তকে গতকাল আদালতে তোলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে, প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।'

এদিকে, যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে আজ রোববার বেলা ১১টায় 'যৌন নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার, ভুক্তভোগীর অধিকার' এ স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী তাফান্নুম সাদাফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ঘটনার পর অভিযুক্তের বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতরা ভিক্টিম ব্লেমিং করছেন, ভুক্তভোগীকে হেনস্তা করছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করছি। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সবার সহযোগিতা আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।'

 

 

Comments

The Daily Star  | English

UK govt unveils 'tighter' immigration plans

People will have to live in the UK for 10 years before qualifying for settlement and citizenship

1h ago