ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি ছিল বাবা-ছেলের রোজগারের একমাত্র সম্বল 

একমাত্র ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (মিশুক) ছিনতাইয়ের পর অসহায় হয়ে পড়েছেন মো. সোহেল হোসেন (৪০) ও তার ছেলে মো. বাঁধন হোসেন(১৮)। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

ছোট ছেলের পড়ার খরচ ও সংসারের খরচ সবই চলত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (মিশুক) আয়ে। বাবা ও ছেলে সময় ভাগ করে নিয়ে সারা দিন অটোরিকশা চালিয়ে আসছিলেন।

আজ শনিবার দুপুর ২টায় মুন্সিগঞ্জ শহরের খালইস্ট এলাকা থেকে একমাত্র ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (মিশুক) ছিনতাইয়ের পর অসহায় হয়ে পড়েছেন মো. সোহেল হোসেন (৪০) ও তার ছেলে মো. বাঁধন হোসেন(১৮)।

শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে অটোরিকশার খোঁজ করছেন তারা।

মো. সোহেল শহরের দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা। তার ১৩ বছর বয়সী ছোট ছেলে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

জানা যায়, সোহেল হোসেন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অটোরিকশাটি চালাতেন। এরপর অটোরিকশাটি নিয়ে বের হতেন তার ছেলে বাঁধন।

আজ শনিবার দুপুরে ছিনতাইয়ের সময় অটোরিকশাটি (মিশুক) চালাচ্ছিলেন বাঁধন। ছিনতাই হওয়ার পর কিছুদূর দৌঁড়ে গিয়ে রিকশাটি ধরার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু অনেক দ্রুত গতিতে চলার কারণে চোখের সামনেই পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'শহরের কাঁচাবাজার থেকে এক নারী ও এক পুরুষ নির্দিষ্ট গন্তব্য উল্লেখ না করে মিশুক নিয়ে যেতে বলে। তারপর পথিমধ্যে পুরুষ যাত্রী রিকশা থেকে নেমে যান। তারপর আরেকজন পুরুষ যাত্রী মাঝপথে রিকশায় আমার গা ঘেষে পাশের সিটে বসেন। কিছুদূর যাওয়ার পরে সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রাস্তায়। তারপর সে নিজেই রিকশা চালিয়ে পালিয়ে যায়।'

'পাশে বসা ছিনতাইকাররীর পকেটে পিস্তলের মতো কিছু দেখতে পেয়েছিলাম। আর কোমড়ে হ্যান্ডকাফ দেখেছি। অটোরিকশাটি ছাড়া আমাদের আর রোজগারের পথ নেই,' বলেন তিনি।

অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের পর বাবাকে মোবাইলে ফোন করে ঘটনাটি জানান বাঁধন। বাবা সোহেল হোসেন তাকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের ঘটনাটি বলেন। সেখান থেকে সদর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন তারা। তাদের ধারণা, যাত্রী সেজে পরিকল্পিতভাবে ছিনতাইকারীরা গাড়িটি নিয়ে পালিয়েছে।

অসহায় সোহেল হোসেন অশ্রুসিক্ত চোখে এই সংবাদদাতাকে বলেন, '৩ বছর আগে ৮৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে রিকশাটি কিনেছিলাম। পরিশ্রম করে সব টাকাও পরিশোধ করা হয়েছিল। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে ৭০০-৮০০ টাকা রোজগার হত। দিনের বেলা আমি রিকশা নিয়ে বের হতাম আবার কখনো আমার ছেলে নিয়ে বের হত। সংসারের খারাপ অবস্থার জন্য বড় ছেলে বাঁধনকে স্কুলে পাঠাতে পারিনি। তাই ছোট ছেলেকে পড়াশুনার জন্য স্কুলে পাঠিয়েছি। প্রতিদিন যে টাকা আসতো তা দিয়ে পরিবারের সংসার চলতো। কিন্তু এখন রিকশাটি না থাকায় কিভাবে সংসার চলবে তাও ভেবে পাচ্ছিনা।'

'পুলিশ ও আশেপাশের পরিচিত মানুষজনদের কাছে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি কোনোভাবে ছিনতাই যাওয়া রিকশাটি পাওয়া যায় কিনা। আমাদের কোন শত্রু নেই। কাউকে সন্দেহ করার মতোও নেই,' বলেন তিনি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুন্সিগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ মিশুকটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে পুলিশে তদন্ত চলছে।'

Comments

The Daily Star  | English

The life cycles of household brands

For many, these products are inseparable from personal memory

14h ago