জামিন আদেশ পৌঁছেনি সুনামগঞ্জে, ঝুমনের মুক্তি পেতে আরও অপেক্ষা

ঝুমন দাশ আপন। ছবি: সংগৃহীত

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা ঝুমন দাশ আপনকে গত বৃহস্পতিবার শর্তসাপেক্ষে এক বছরের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে জামিনের আদেশ সুনামগঞ্জে না পৌঁছানোয় এখনই মুক্ত হচ্ছেন না ঝুমন।

সুনামগঞ্জে ঝুমন দাশের আইনজীবী দেবাংশু শেখর দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ ও কাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় হাইকোর্ট থেকে জামিনের আদেশ এসে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নেই। আশা করছি আদেশটি রোববার নাগাদ সুনামগঞ্জ আদালতে এসে পৌঁছাবে। তারপর তা কারাগারে পৌঁছালেই জামিনে মুক্ত হবেন ঝুমন।'

সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মো. শরীফুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাইকোর্টের জামিন আদেশ সুনামগঞ্জের নিম্ন আদালতে এসে সেখান থেকে ফ্রেশ বেইল অর্ডার আসলে পরে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'

ঝুমন দাশের মুক্তির জন্য অপেক্ষা করে আছেন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁওয়ে তার পরিবার ও স্বজনরা।

ঝুমন দাশের ভাই নুপুর দাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঝুমনের জামিন হওয়ায় মাসহ পরিবারের সবাই খুবই আনন্দিত এবং সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে জামিন আদেশ না আসায় সবার অপেক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আশা করছি, রোববার বা সোমবার নাগাদ সে জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরবে।'

ঝুমন দাশের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এখনই কোনো নিরাপত্তা হুমকি দেখছি না। কিন্তু যারা হেফাজতে ইসলামের হয়ে গ্রামে হামলা করেছে, তারাও মুক্ত এবং সে মামলার তদন্ত এখনও চলছে। সেক্ষেত্রে কিছুটা নিরাপত্তার সংকট তো আছেই। তবে এখন আসলে ঝুমনের মুক্তির বিষয়টাই গুরুত্বপূর্ণ।'

গত ১৬ মার্চ হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের দাবি ও হুমকির মুখে সেই রাতে ঝুমন দাশকে আটক করে পুলিশ।

ঝুমন দাশকে আটক করলেও হেফাজতে ইসলাম সমর্থকরা পরদিন ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁওয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে অন্তত ৯০টি বাড়িঘরসহ ৪টি মন্দির ভাঙচুর করে। হামলায় গ্রামবাসী কয়েকজন ছাড়াও ঝুমন দাশের স্ত্রী সুইটি রানী দাশও আহত হন।

হামলার ঘটনায় পরদিন দুটি পৃথক মামলা দায়ের হলেও ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম কোনো মামলা দায়ের করেনি।

পরে ২২ মার্চ ঝুমন দাশকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করে শাল্লা থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল করিম। এ মামলায় ২২ মার্চ ঝুমনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

মামলাটি প্রথমে শাল্লা থানার উপ-পরিদর্শক আমির খসরু তদন্ত করেন এবং পরে তদন্তভার সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে দেওয়া হয়।

গত ২০ এপ্রিল ঝুমন দাশের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সুনামগঞ্জের আদালত এবং ২৯ এপ্রিল তিনি একই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

২ মে থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সুনামগঞ্জ আদালতে ৪ বার এবং উচ্চ আদালতে ১ বার ঝুমন দাশের জামিন নামঞ্জুর হয়।

২৭ জুলাই ঝুমন দাশকে একমাত্র আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করে সুনামগঞ্জ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।

সর্বশেষ ঝুমন দাশের মা নিভা রানী দাশ হাইকোর্টে আবারও জামিন আবেদন করেন। এসময় ঝুমনের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন জেড আই খান পান্না।

এই জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মুস্তাফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার ঝুমন দাশকে শর্তসাপেক্ষে ১ বছরের জন্য জামিন দেন।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতের অনুমতি ছাড়া আগামী ১ বছরের জন্য নিজ জেলা সুনামগঞ্জের বাইরে যেতে পারবেন না ঝুমন দাশ।

Comments

The Daily Star  | English

Cumilla rape: Main accused among two more arrested

Three others were arrested in the same case early today

10m ago