নিয়ন্ত্রণের বাইরে অনলাইন জুয়া

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নেতৃত্বে জুয়া ও অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালানোর অভিযোগে ২০১৯ সালে সুপরিচিত কিছু স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মাসব্যাপী এ অভিযান মূলত স্পোর্টিং ক্লাবভিত্তিক জুয়ার আসরকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। কিন্তু, আইনের চোখ এড়িয়ে অনলাইন জুয়া ঠিকই চলছে দেশে।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জুয়া, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও অন্যান্য দুর্নীতির অভিযোগে পাঁচটি স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান শুরু হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাসহ ২৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এসব অভিযানে।
এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে সরকারের উচ্চপদস্থরা বারবার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু, ওই বছরের ১ নভেম্বরের পর এই ধরনের আর কোনো অভিযান চলেনি।
গতকাল শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, 'এখন ক্লাবভিত্তিক ক্যাসিনো ও জুয়া নিয়ন্ত্রণে। আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছি। যদি আবার এই ধরনের কোনো কার্যকলাপ খুঁজে পাই, তাহলে আবার অভিযান শুরু করব।'
এখন যে অনলাইনভিত্তিক জুয়া চলছে, তা অবশ্য স্বীকার করেন তিনি।
তবে, সাইবার মনিটরিং ইউনিট সতর্ক অবস্থায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা তথ্য পাওয়া মাত্রই অভিযান চালাই।'
গত ১ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দারা রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে একটি অনলাইন জুয়া চক্রের তিন সদস্য দেলোয়ার হোসেন, মহিউদ্দিন ও জামাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে গত মে মাসে এন্টি-টেরোরিজম ইউনিট স্ট্রিমকার নামের সোশ্যাল মিডিয়া জুয়া অ্যাপ ব্যবহার করে অর্থ পাচারের অভিযোগে একটি চক্রের চার সদস্যকে আটক করে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, বিভিন্ন অ্যাপ ও সাইট ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া চলছে। বিটকয়েন বা ডিজিটাল মুদ্রার (ক্রিপ্টোকারেন্সি) মাধ্যমে ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন অনলাইনে জুয়া খেলা হচ্ছে। অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান চলাকালে ২২টি স্থানে প্রায় ৩০টি অভিযান পরিচালিত হয়। অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালানোর অভিযোগে র্যাব ওই সময় ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান, ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব এবং কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফিকুল আলম ফিরোজকে গ্রেপ্তার করে।
যুবলীগ পরে এই নেতাদের বহিষ্কার করে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তখন বেশ কয়েকজন পৃষ্ঠপোষকের নাম প্রকাশিত হলেও, তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে যুবলীগ নেতা এবং টেন্ডার মোগল জি কে শামীমও আছেন। এ ছাড়া, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইন চার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর সেলিম প্রধান, স্থানীয় তিন আওয়ামী লীগ নেতা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মইনুল হক মঞ্জু এবং হাবিবুর রহমান মিজানকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানে বিপুল পরিমাণ জুয়ার সরঞ্জাম, মদ, ২২টি আগ্নেয়াস্ত্র, নগদ ৮ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা, ১৬৬ দশমিক ২৭ কোটি টাকার এফডিআর এবং প্রায় ৮ কেজি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়। এ ছাড়া, র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ২০৪ জনকে জরিমানা করে বা বিভ্নিন মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়।
কিছু ক্রীড়া সংগঠকের সঙ্গে জোট বেধে কীভাবে একদল রাজনৈতিক নেতা রাজধানীর বিখ্যাত স্পোর্টিং ক্লাবগুলোকে চব্বিশ ঘন্টা ক্যাসিনো ব্যবসা চালানোর বিলাসবহুল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল, র্যাবের অভিযান তা আলোচনায় নিয়ে আসে।
এসব ঘটনায় র্যাব, সিআইডি ও দুর্নীতি দমন কমিশন ১৫ জনের বিরুদ্ধে ৫৮টি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে ১০টি মামলা তদন্ত করে ৯টির চার্জশিট জমা দিয়েছে র্যাব।
দুদকের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, তারা প্রায় ২২টি দুর্নীতির মামলার মধ্যে ১৩টির চার্জশিট জমা দিয়েছেন। বাকি মামলাগুলো পুলিশ তদন্ত করছে।
অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম।
Comments