পাকিস্তান থেকে ভারতে জাল রুপি পাচার, ট্রানজিট বাংলাদেশ

গত কয়েক বছর ধরে শ্রীলংকা ও বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে একটি বহুজাতিক মুদ্রা জালিয়াতি চক্র পাকিস্তান থেকে ভারতে নকল রুপি পাচার করছে।

এই সিন্ডিকেট পাকিস্তানের লাহোরে ভারতীয় জাল নোট ছাপিয়ে সেগুলো মার্বেল পাথরে ভর্তি কন্টেইনারে করে সমুদ্রপথে শ্রীলংকায় পাঠায়।

শ্রীলংকা থেকে কন্টেইনারগুলো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়।

এরপর চালানগুলো ট্রাকে করে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি ঢাকায় পাঠানো হয়। এরপর সেগুলো স্থলপথে ছোট ছোট চালানে ভারতে পাচার করা হয়।

এই সিন্ডিকেটের ২ বাংলাদেশি সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল শনিবার এসব তথ্য জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

তদন্ত সংশ্লিস্ট ডিএমপি সদস্যরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ফাতেমা আখতার অপি ও শেখ মো. আবু তালেব নামে সন্দেহভাজন ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।

পুলিশ রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় ফাতেমার বাসা থেকে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল ভারতীয় রুপি উদ্ধার করেছে।

ডিএমপির (গুলশান) এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ফাতেমা প্রায় ১০ বছর আগে পাকিস্তানি নাগরিক দানেশকে বিয়ে করেন। নোট জাল করার অভিযোগে ২০১০ সালে দানেশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এর আগেও মতিঝিল থানায় দায়ের করা নোট জালের মামলায় ফাতেমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে জানান এই কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির কর্মকর্তা বলেন, 'জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দানেশের হার্ট অ্যাটাক হয় এবং তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এরপর ফাতেমা এই অবৈধ সিন্ডিকেটের বাংলাদেশি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেন।'

গতকাল দুপুরে গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, 'খিলক্ষেত থানার বনরূপা আবাসিক এলাকার মেইন গেইটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একজন নারী ভারতীয় জাল রুপিসহ অবস্থান করছেন বলে তথ্য পায় খিলক্ষেত থানা পুলিশ। সেখানে অভিযান চালিয়ে ফাতেমা আক্তার অপিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছে ৫০ হাজার ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধার করা হয়।'

আসাদুজ্জামান আরও জানান, অপির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাসা থেকে আরও ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধার করা হয় এবং ডেমরার সারুলিয়া থেকে জালিয়াতি চক্রের আরেক সদস্য শেখ মো. আবু তালেবকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তদন্তকারীরা জানান, ফাতেমা জাল নোট সংরক্ষণ করার জন্য তার বাসায় একটি 'বিশেষ কক্ষ' তৈরি করেন। পুলিশ সেখানে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা ৫০০টিরও বেশি মার্বেলের বস্তার সঙ্গে লুকিয়ে রাখা ৯৫ বস্তা জাল রুপি খুঁজে পায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য এটা করা হয়েছিল।

এই তদন্তের সঙ্গে জড়িত ডিএমপির (গুলশান) আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানি নাগরিক সুলতান হচ্ছেন এই চক্রের মূলহোতা। তিনি লাহোর থেকে এর সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন।

তিনি আরও জানান, সুলতানের বাবা মো. শাফিও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। ফাতেমা পাকিস্তানে সুলতানের বাড়িতে বেশ কয়েকবার গেছেন। তিনি শাফিকে 'বাবা' বলে সম্বোধন করতেন।

চক্রটি ভারতে জাল টাকা চোরাকারবারের জন্য 'কাটআউট সিস্টেম' নামে একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করতো। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২ পক্ষ একে অপরের ব্যাপারে কিছুই জানতে পারতো না।

ডিএমপি কর্মকর্তা বলেন, 'সিন্ডিকেট দ্বিতীয় পক্ষকে শুধুমাত্র ১টি জাল নোটের সিরিয়াল নং অথবা জাল নোটের অংশ বিশেষ দেন। এর সিরিয়াল মিলে গেলে প্রথম পক্ষ জাল নোটের চালান পাঠাতো।'

পুলিশ আরও জানায়, চক্রটি বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তপথ দিয়ে মুদ্রা চোরাকারবার করে।

সিন্ডিকেটের সদস্যদের পেমেন্ট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ডিএমপির কর্মকর্তারা জানান, তারা গ্রেপ্তারকৃতদের জেরা করার পর এ ব্যাপারে ধারণা পেতে পারেন।

ইতোমধ্যে ঢাকার একটি আদালত গতকাল গ্রেপ্তারকৃত ২ জনের ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় জাল ভারতীয় রুপি উদ্ধারের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান) ইফতেখারুল ইসলাম জানান, তাদের কাছে চক্রটির কার্যক্রম সংক্রান্ত কিছু তথ্য ছিল। যেহেতু তারা 'কাটআউট ব্যবস্থা' ব্যবহার করেন, এ জন্য তাদের সদস্যদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে কিছুটা সময় লাগবে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আমাদের কাছে থাকা তথ্য ব্যবহার করে তদন্ত করছি। আশা করছি শিগগির চক্রের পলাতক সদস্যদের গতিবিধি জানতে পারবো।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Govt cuts interest rates on savings tools

Finance ministry lowers rates on four key savings instruments

3h ago