পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতায়ও থামছে না ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, আতঙ্কিত যাত্রী-রেলকর্মী

ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ ও প্রশাসনের লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, বিট পুলিশিং, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে পরও চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া থামছে না। আসন্ন ঈদুল ফিতরের সময় এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও ট্রেন সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ বলছে, দিন কিংবা রাত সবসময়ই চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হচ্ছে। এতে দিন দিন আহতের সংখ্যা বাড়ছে, ট্রেনেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত পাথর ছোড়ার আতঙ্কের মধ্যেই রেলে চলাচল করছেন হাজারো যাত্রী। যাত্রীদের পাশাপাশি গুরুতর আহত হচ্ছেন ট্রেন চালক, গার্ড ও অন্যান্য কর্মকর্তারা।

রেলওয়ে ও পরিবহন বিভাগ, আরএনবি এবং জিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) সূত্রে জানা গেছে, শুধু গত এক বছরেই দেড়শ'র বেশি মানুষ পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় আহত হয়েছেন। তবে এ ধরনের ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ বা শাস্তি খুব কমই হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও রেলকর্মকর্তারা।

পুলিশ ও রেল কর্মকর্তারা জানান, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপকারীদের ৮০ ভাগই বস্তিতে বসবাসকারী শিশু-কিশোর। ট্রেন লাইনের পাশে বা দূরবর্তী কাচা-পাকা বস্তিঘর থেকেই চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় দূর থেকে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটছে। এতে করে জানালার পাশে বসে থাকা যাত্রীরা আহত হচ্ছেন। অনেক সময় ট্রেনের জানালার কাঁচ ভেঙেও অনেকে আহত হয়েছেন।

ছবি: সংগৃহীত

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ৫টি জেলার ৩৬টি স্পট পাথর নিক্ষেপের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার ভাটিয়ারী, বাড়বকুন্ড, চিনকি আস্তানা, নগরীর পাহাড়তলী, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা (কিছু অংশে), ফেনীর ফাজিলপুর, ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন, কাওরানবাজার নরসিংদী, জিনারদী, ঘোড়াশাল, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারীর সৈয়দপুর, আক্কেলপুর, উল্লাপাড়া, যমুনা সেতু, খুলনার ফুলতলা, বেনাপোল ইত্যাদি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটছে।

রেলওয়ে চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রেনেও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। গত ৬ এপ্রিল সিজিপিওয়াই লোকোসেডের এলএম মো. মনোয়ার হোসেন ময়নামতি স্টেশনে দুষ্কৃতকারীর ছোড়া পাথরে আহত হন। গত ৫ জানুয়ারি পাথর হামলার শিকার হন আখাউড়া শেডের সহকারি এলএম তৌহিদুল মুরছালিন। দুটো ঘটনাই আহতরা মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন।

আগে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে হলেও সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনেও শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেন লাইনের ২ নম্বর গেট রেলক্রসিং, ষোলশহর, আমিন জুটমিলসহ কয়েকটি এলাকায় সম্প্রতি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এতে ৩ জন শিক্ষার্থী মারাত্মক আহত হয়েছেন। ফলে নতুন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। হেলমেট পরে শিক্ষার্থীদের ট্রেন ভ্রমনের ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম পুর্বাঞ্চলের রেলওয়ের লোকোমাষ্টার (এলএম) আব্দুল আওয়াল রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিশু থেকে শুরু করে এমনকি প্রাপ্তবয়স্করাও রেললাইনে বসে কিংবা হাটার সময় হঠাৎ করেই কোনো কারণ ছাড়া চলতি ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারে।'

'যাত্রী, চালক কিংবা গার্ড কেউই এ থেকে নিরাপদ নয়। ইঞ্জিনের কাঁচ, জানালার কাঁচ, হর হামেশাই নষ্ট হচ্ছে এই কারণে। এটি আসলে বলে বোঝানো সম্ভব না,' বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম রেলের সিজিপিওয়াই এর সহকারী এলএম আব্দুল ওয়াদুদ শিমুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'এটা একটা মানসিক রোগ বলে আমার মনে হয়। আমাদের অনেক সহকর্মী রাতে ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে আতঙ্কে থাকেন- কখন না আবার পাথরের আঘাতে আহত হতে হয়! আর আহত হয়ে চিকিৎসা পেতেও অনেক সময় চলে যায়। ট্রেন চালকদের সবসময়ই আতঙ্কে দিন পার করতে হচ্ছে।'

বাংলাদেশ রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করা হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। ৩০২ ধারা অনুযায়ী, পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

তবে রেলওয়ে পুলিশ বলছে, ভবঘুরে, টোকাই ও পথশিশুদের দ্বারাই ঘটছে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। ফলে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. হাসান চৌধুরী বলেন, 'আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। এটা সতেচন না হলে রোধ করা সম্ভব নয়। আমরা বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনকে আমাদের কার্যক্রমে সংযুক্ত করে এটির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'

'যারা এ ধরনের কাজ করে মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত করছেন তাদের আমরা আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি,' বলেন তিনি।

২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট সীতাকুণ্ডে পাথরের আঘাতে নারী প্রকৌশলী প্রীতি দাশের মৃত্যুর পর ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসে। ২০২১ সালে ভৌরবে পাথরের আঘাতে চোখে গুরুতর আঘাত পান কিশোরগঞ্জ এক্সপেসের সহকারী এলএম কাউসার আহমেদ।

Comments

The Daily Star  | English

Polls could be held in mid-February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has said the next general election could be held in the week before the start of Ramadan in 2026.

1h ago