শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা: ‘আমারও প্রশ্ন, আমিই কেন বাদী’

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

'গণিত শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল স্যারকে আমার চাকরিজীবনে ধর্ম নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে শুনিনি। তিনি একজন ভালো শিক্ষক,'– কথাগুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী মো. আসাদ মিয়াঁ।

আসাদ গত ১০ বছর ধরে ওই স্কুলে ইলেকট্রিশিয়ান পদে কর্মরত আছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে উল্লিখিত কথাগুলো বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'মামলার বাদী হতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন এবং আমি তাতে রাজি হই।'

আসাদের বক্তব্য, 'তবে আমার সঙ্গে ঘটনার ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ কোনো আলোচনা করেনি। শুধু মামলার বাদী হতে সদর থানায় ডাকা হয়েছিল।'

আসাদ আরও বলেন, 'আমারও প্রশ্ন আমিই কেন মামলার বাদী? স্কুলে তো আরও অনেক মানুষ ছিলেন।'

মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় গত ২২ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন আসাদ।

জানা যায়, পেনাল কোড ২৯৫ ও ২৯৫ (এ) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা, কথার মাধ্যমে ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান করা ও ধর্মগ্রন্থ অবমাননার অপরাধে এ মামলা করা হয়।

পুলিশ নিজেই মামলার এজাহার লিখেছে উল্লেখ করে পঞ্চম শ্রেণি পাস আসাদ মিয়াঁ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ মামলার এজাহার লেখার পর প্রধান শিক্ষককে একজন বাদী লাগবে বলে জানায়। তারপর প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোন দিয়ে থানায় আসতে বলেন। পরে পুলিশের লেখা এজাহার প্রধান শিক্ষক ও পুলিশ আমাকে পড়ে শোনায়। কিন্তু, এ এজাহার তৈরির আগে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। যেসব কথা এজাহারে লেখা হয়েছে তার ব্যাপারে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।'

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, 'শিক্ষক হৃদয় মন্ডল কিছুদিন ধরে ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিদ্রূপ ও কটূক্তিমূলক কথাবার্তা বলে আসছেন।'

কিন্তু, মামলার বাদী এ বক্তব্য অস্বীকার করেছেন।

আসাদ বলেন, 'যে ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কেও আমি কিছু জানি না।'

আসাদ বলেন, 'হৃদয় মন্ডল স্যারের যে অডিও রেকর্ড করা হয়েছে সেটি আমি শুনিনি। ছাত্রদের কাছ থেকে মৌখিক বক্তব্য শুনেছি। ক্লাসে শিক্ষক কী কথা বলেছিলেন তা আমি শুনিনি। ছাত্রদের কাছ থেকে শুনেছি। আমি তখন নিচতলায় ছিলাম। ছাত্ররা যখন লিখিত অভিযোগ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে যাচ্ছিল তখন শুনেছিলাম।'

স্কুলে বিক্ষোভের দিন ছাত্রদের পাশাপাশি বহিরাগত অনেকে ছিলেন বলেও জানান আসাদ। বলেন, 'সেদিন মন্ডল স্যারকে প্রধান শিক্ষক ডেকে এনেছিলেন। প্রধান শিক্ষক তখন বলেছিলেন যদি আপত্তিকর কথা বলে থাকেন, তাহলে ছাত্রদের কাছে মাফ চান। কিন্তু, স্যার এতে রাজি হননি। তিনি ওই মন্তব্য করেননি বলে বলেছিলেন।'

জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদ দাবি করেন, 'আসাদকে কে মামলার বাদী হতে বলেছে তা আমি জানি না। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক প্রতিনিধি ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেই সব করা হয়েছে।'

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিনহাজ-উল-ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'মামলার বাদী হতে কাউকে চাপ দেওয়া হয়নি। মোবাইলে ধারণকৃত অডিও বক্তব্য বাদীসহ অনেকে শুনে মনে করেছে ইসলাম ধর্মের ওপর বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'স্কুল কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এ জন্য মামলা নেওয়া হয়েছে।' 

Comments

The Daily Star  | English

Marco Rubio holds phone call with Yunus

The US Secretary of State and the CA spoke for 15 minutes

1h ago