৩ যুগ ধরে তারু মিয়া রেস্টুরেন্টে পরিযায়ী পাখির মাংস বিক্রি, জরিমানা ১০ হাজার

তারু মিয়া রেস্টুরেন্টে অতিথি পাখির মাংস রান্না হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরে ৩ যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্য ও পরিযায়ী পাখির মাংস রান্না করে বিক্রি করে আসছে 'তারু মিয়া রেস্টুরেন্ট'। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে ছাড় পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

আজ রোববার জৈন্তাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিপামনি দেবীর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত এই রেস্টুরেন্টটিতে অভিযান চালায়। অভিযানে বন অধিদপ্তর ছাড়াও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের একটি দল উপস্থিত ছিল।

পরিবেশবাদী ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৩ যুগ ধরে এই রেস্টুরেন্টে বন্য ও অতিথি পাখির মাংস রান্না করা হয়। এই অল্প জরিমানা এই রেস্টুরেন্টের একদিনের মুনাফা থেকেও কম। এ অবস্থায় এভাবে জরিমানা করে বন্য ও পরিযায়ী পাখির মাংস বিক্রি বন্ধ করা যাবে না।

তবে এই অভিযানে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা রেস্টুরেন্টটি থেকে প্রথমবারের মতো বালিহাঁস, ঘুঘু, কালিম, ডাহুক, কোড়া, শামুকখোল ও বক পাখির কাঁচা মাংস জব্দ করেছেন।

পরীক্ষাগারে পাখিগুলোর প্রকৃত জাত নিশ্চিতের পর রেস্টুরেন্টটির মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

অভিযানের সময় বন্য ও পরিযায়ী পাখির রান্না করা মাংস বিক্রির অপরাধে রেস্টুরেন্টটিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিপামনি দেবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রেস্টুরেন্টের মালিক ওয়াহিদ মিয়া অবৈধভাবে বন্য ও পরিযায়ী পাখি বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ভবিষ্যতে আর এগুলো বিক্রি করবেন না বলে লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন।'

স্থানীয়রা জানান, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টটি গত প্রায় ৩ দশক ধরে বন্য ও পরিযায়ী পাখির মাংস ভোজে আগ্রহীদের অন্যতম আকর্ষণ। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী যে কোনো ধরণের বন্যপ্রাণী ধরা ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ হলেও তারু মিয়া রেস্টুরেন্টসহ এ এলাকায় অন্তত ১০টি রেস্টুরেন্টে প্রকাশ্যেই বিক্রি হয় রান্না করা পাখির মাংস।

২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর তারু মিয়া রেস্টুরেন্ট ও তার পাশের একটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এরপর বেশ কিছু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও, এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হয়নি বলে দাবি পরিবেশবাদীদের।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভিযান চলাকালে হরিপুর বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ ওই রেস্টুরেন্ট মালিককে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে আসেন। প্রথমে মাংস বিক্রি হয় না বলে দাবি করলেও অভিযানের ঠিক আগে ধারণ করা ভিডিওতে প্রমাণ থাকায় তারা পিছু হটেন। তাদের এই অবস্থান প্রমাণ করে যে এই ব্যবসার পেছনে বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে।'

তিনি বলেন, 'আগেও জরিমানা হয়েছে কিন্তু সুফল আসেনি। এই সামান্য টাকা তাদের একদিনের ব্যবসায়িক মুনাফা থেকে অনেক কম। তাই এভাবে জরিমানা না করে এসব রেস্টুরেন্টের মালিকদের কারাদণ্ড দেয়া হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।'

ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানায় কোন সুফল আসে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিপামনি দেবী বলেন, 'দেখা যাক। এরপরও যদি বিক্রি চালিয়ে যায়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জব্দ করা পাখির মাংসের নমুনা ঢাকায় বন বিভাগের গবেষণাগারে পাঠানো হবে। পরীক্ষায় এসব পাখির জাত নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা ওই রেস্টুরেন্টের মালিকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।'

Comments

The Daily Star  | English

Seven killed in Mymensingh road crash

At least seven people were killed and several others injured in a head-on collision between a bus and a human haulier in Mymensingh’s Phulpur upazila last night

1d ago