‘আইতের বেলাতে আরও বেশি জার নাইগবার নাগছে’

'সোমবার সকাল থাকি খুব জার বারি গ্যাইছে। আইতের বেলাতে আরও বেশি জার নাইগবার নাগছে। জারের খপ্পর থাকি বাইচবার জইন্যে হামরাগুলা জাইবরা-জঙ্গল নিয়া আগুন ধরে দিয়া শরীল গরম কইরবার নাগছি। এদোন জার যদি থাকে তাকহইলে হামারগুলার কাজ কাম হবার নয়। হামরাগুলা না খ্যায়া থাইকমো।'
কথাগুলো দ্য ডেইলি স্টারকে বলছিলেন লালমনিরহাট শহরের ফুটানী বাজার এলাকার ভ্যানচালক মফিজুল ইসলাম (৪৪)।
কনকনে ঠাণ্ডা আর হিমেল বাতাসের দাপটে থমকে গেছে উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের জনজীবন। সারাদিন দেখা মিলছে না সূর্যের। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না শ্রমজীবীরা। কষ্টে আছেন ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর, তিস্তা ও ধরলা নদী তীরবর্তী, চরাঞ্চল ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষজন। চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের নেই প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র আর শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্যও নেই তাদের।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুবল চন্দ্র রায় দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সোমবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তবে সোমবার রাতে শীতের প্রকোপ আরও বেড়েছে। সন্ধ্যা থেকে কুয়াশা পড়তে শুরু করে এবং সকাল বেলা চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদীর চর সারডোব এলাকার কৃষক মেহের আলী (৬৩) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিষানের ঘর খ্যাতো কাজ ইরবার পাবার নাগছে না জারের জইন্যে। জারের ঠ্যালায় হামরাগুলা নিজেদেরকে টোপলা করি থুইবার নাগছি। হাত-পা টাডারি ঠাণ্ডা। শরীল কোকরা নাগি যায়। কাইও কাইও খ্যাতো কাজ করি গ্যাইলেও ম্যালাক্ষণ থাইকবার পায় না।'
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর চর কালমাটি এলাকার শীতার্ত দিনমজুর মন্তেজ আলী (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামারগুলার গরম কম্বল নাই। জাইবরা-জঙ্গল জড়ো করি আগুন দিয়া শরীল গরম কইরবার নাগছি। জার থাকি এ্যাকনা রেহাই পাই। আগুন নিভি গ্যাইলে ফির জার নাগে। হামার গুলার টাকাও নাই যে হামরা কম্বল কিনমো। ছেড়া-ফাঁটা কাপড়ের দোকানোতও দাম বেশি। হামরাগুলা কষ্টোত আছোং।'
দুই জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় শীতার্ত দু:স্থদের জন্য সরকারিভাবে ২২ হাজার ১০০টি কম্বল ও নগদ ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আর কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার শীতার্ত দু:স্থদের জন্য ৩৫ হাজার ৭০০ কম্বল ও নগদ ১ কোটি ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি এসব বরাদ্দ সংশ্লিষ্ট উপজেলাতে পাঠানো হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারি বরাদ্দের কম্বল বিতরণ চলছে। বরাদ্দকৃত নগদ অর্থ দিয়ে কম্বল কিনে করে তা শীতার্ত দু:স্থদের দেওয়া হচ্ছে।'
প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
Comments