‘আজ আমার একটি ঘর ও এক টুকরো জমি হয়েছে’

এক সন্তানকে নিয়ে জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত আলতা বেগম মায়া। নামের সঙ্গে মায়া থাকলে জীবনভর পেয়েছেন অবহেলা। ৪৫ বছর বয়সে এসে ঠিকমতো হাঁটতে না পারায় জীবন চালানো দিন দিন দুরূহ হয়ে উঠেছিল। তাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর তার মাথার ওপর এখন ভরসার বটবৃক্ষ এবং বেঁচে থাকার আশ্রয় হয়ে উঠেছে।
আলতা বেগম মায়া। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

এক সন্তানকে নিয়ে জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত আলতা বেগম মায়া। নামের সঙ্গে মায়া থাকলে জীবনভর পেয়েছেন অবহেলা। ৪৫ বছর বয়সে এসে ঠিকমতো হাঁটতে না পারায় জীবন চালানো দিন দিন দুরূহ হয়ে উঠেছিল। তাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর তার মাথার ওপর এখন ভরসার বটবৃক্ষ এবং বেঁচে থাকার আশ্রয় হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, 'মা-বাবার সংসার ছিল অভাবের। তবুও সবকিছু বিক্রি করে নিজেদের নিঃস্ব করে আমাকে বিয়ে দেন। কিন্তু, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন ও অত্যাচারের কারণে ১ বছরও টিকেনি সেই সংসার। যৌতুক দিতে না পারায় স্বামী চলে গেছেন, করেছেন আরেকটি বিয়ে। ১ মাসের সন্তানকে নিয়ে জীবনের তরী ভেসেছে এখানে-সেখানে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে।'

তিনি আরও বলেন, 'একমাত্র সন্তানের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারব না ভেবে অনেক কেঁদেছি। কিন্তু, কোনো উত্তর মেলেনি।'

তবে আজ ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে কেঁদেছেন আলতা বেগম মায়া।

আলতা বেগম মায়া বলেন, 'প্রত্যেকদিন সকালে উঠেই লোকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতাম। কখনো কিছু জুটত, আবার কখনো কিছুই জুটত না। আল্লাহকে অনেকে ডেকেছি। অবশেষে তিনি ডাক শুনেছেন। এই প্রথম আমার কোনো সম্পত্তি হলো। এখন সন্তানের জন্য কিছুতো রেখে যেতে পারব।'

শুধু আলতা বেগম মায়া নন তৃতীয় পর্যায়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় মোট ৯৭টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। যার মধ্যে আছেন- ৭ জন ভিক্ষুক, ২৩ জন স্বামী পরিত্যক্তা, ১৭ জন বিধবা ও ৩ জন প্রতিবন্ধী। কুলাউড়া সহকারী ভূমি কমিশনার সাইফুল ইসলাম সজল এ তথ্য জানান।

সহকারী ভূমি কমিশনার সাইফুল ইসলাম সজল বলেন, 'তারা আজ থেকে পেলেন একটি ঠিকানা... একটি নিবাস… বানের জলের মতো ভেসে বেড়ানো ঠিকানাবিহীন নূরজাহান, বানেছা, জয়গুন, কুদ্দুস মিয়ার মতো ভূমিহীন মানুষগুলো আজ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প আশ্রয়ণের বাসিন্দা। দিন শেষে প্রাপ্তি- এই মানুষগুলোর তৃপ্তিমাখা হাসি।'

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, '৯৭টি আশ্রয়ণের ঘরের জমিগুলো কারো না কারো দখলে ছিল। জমিগুলো দখলমুক্ত করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে, শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হন দখলদাররা। কারণ, অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে আমাদের অবস্থান ছিল শক্ত।'

তিনি আরও বলেন, 'এসব অসহায় মানুষের জন্য আমরা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ করেছি। সামনে কিছু জায়গাও রাখা হয়েছে, যেন কিছু উৎপাদন করতে পারে। আশ্রয়হীনদের আশ্রয় করে দেওয়ার মতো বড় কাজ করে নিজেই নিজের কাছে প্রশান্তি পেয়েছি।'

আলতা বেগম মায়া বলেন, 'আশ্রয়ণের সামনে কিছু জায়গাও পেয়েছি। সেখানে চাষবাস করে জীবনযাপন করতে চাই। আর ভিক্ষা করতে চাই না। এখন আল্লাহ'র কাছে এটাই দোয়া চাই। আজ আমার একটি ঘর ও এক টুকরো জমি হয়েছে। তাই এই কান্না আনন্দের কান্না।'

Comments

The Daily Star  | English

219 garment factories closed in Ashulia amid labour unrest

There was no report of any attack or vandalism in any factory, or any road blockade anywhere in the area.

22m ago