কক্সবাজারে পর্যটক কমতেই থাকবে?

সমন্বিত পরিকল্পনা, যথাযথ তদারকির অভাব এবং সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনার কারণে সম্প্রতি কক্সবাজারে পর্যটক কমছে বলে মনে করছেন পর্যটক, স্থানীয় নাগরিক ও পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

সমন্বিত পরিকল্পনা, যথাযথ তদারকির অভাব এবং সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনার কারণে সম্প্রতি কক্সবাজারে পর্যটক কমছে বলে মনে করছেন পর্যটক, স্থানীয় নাগরিক ও পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হচ্ছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে স্কুলে নতুন বই বিতরণের কারণে হয়তো অনেকেই ঘুরতে আসেননি। তাদের প্রত্যাশা শিগগির পর্যটকের ঢল নামবে কক্সবাজারে।

কক্সবাজারে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন মারুফা জাহান। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যান তিনি। মারুফা জাহান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমন সময়ে সমুদ্র সৈকতে প্রচণ্ড ভিড় থাকার কথা। কিন্তু সন্ধ্যায় ঘুরতে গিয়ে দেখি সৈকত প্রায় জনশূন্য।'

ধর্ষণের ঘটনার পর কক্সবাজারের পর্যটন খাতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে এবং অনেকেই সেখানে যেতে অনিরাপদ বোধ করছেন বলে মনে করেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

তিনি বলেন, 'কয়েকটি কারণে মানুষ এখানে আসার আগ্রহ হারাতে পারে। প্রথমত হোটেল ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, খাবারের দাম খেয়াল খুশি মতো নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এগুলোর তেমন কোনো মনিটরিং করা হচ্ছে না। আরেকটি বড় কারণ হলো সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনার পর অনেকই এখানে আসতে অনিরাপদ বোধ করছেন।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনার পর আমি প্রতিবাদস্বরূপ এবার কক্সবাজারে না গিয়ে সেন্টমার্টিনে ঘুরতে গেছি। কোনো জিনিসের মূল্য বাড়ানো হলে বা কোনো জায়গায় নিরাপত্তা না থাকলে সেই জিনিস না কিনে বা সেই জায়গায় না গিয়ে এভাবে প্রতিবাদ করলে দেখা যাবে বাধ্য হয়ে প্রশাসন এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।'

তিনি বলেন, 'মানুষ ঘুরতে পছন্দ করে। কিন্তু অনিরাপদ জায়গায় কেউ ঘুরতে যাবে না এটাই স্বাভাবিক। যারা পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত কক্সবাজারের সাম্প্রতিক অবস্থার জন্য তারা কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না।'

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধর্ষণের ঘটনার পর কক্সবাজারের পর্যটন খাতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। অনেকেই এখন আসতে অনিরাপদ বোধ করছেন। এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো এখানে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা।'

আজ শনিবার বিকাল পৌণে ৪টায় কক্সবাজার হিমছড়ির সালসা বিচ থেকে তোলা ছবি। ছবি: মারুফা জাহান

তিনি বলেন, 'ছুটির দিনগুলোতে পর্যটক বেড়ে যায়। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা এক থেকে দেড় লাখ মানুষের আবাসন ব্যবস্থা আছে। অনেক সময় দেখা যায় কেউ এখানে আসার পর থাকার জায়গা খোঁজেন। ফলে অনেক সময় হোটেলে সিট ফাঁকা না থাকায় বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিতে হয়। আগে থেকেই থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে কক্সবাজারে আসা উচিত না।'

কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কক্সবাজারে বিভিন্ন খাতে দখলদারিত্ব বেড়েছে। ঝাউবাগান সাবাড় হয়ে যাচ্ছে। পর্যটকদের অবারিত সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, যেটি এখানে নেই। হোটেলগুলোতে যে যার মতো ভাড়া নিচ্ছেন, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা জমা করে রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে মোড়ে মোড়ে শুঁটকির দোকান অনেক পর্যটকের বিরক্তির একটা কারণ।'

তিনি অভিযোগ করেন, 'প্রশাসন প্রটোকল দিতে আর মিটিং করতেই অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকেন। কক্সবাজার নিয়ে আসলে তেমন কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা নেই। সমন্বিত পরিকল্পনা ও যথাযথ তদারকির অভাবে আমাদের বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের যে ঐতিহ্য তা হারাতে বসেছে।'

হোটেল দ্য গ্র্যান্ড সেন্ডির ম্যানেজার (ডিজিটাল) আনিসুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনার পর কক্সবাজারের পর্যটন খাতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে তারপর থেকে নিরাপত্তা কিছুটা জোরদার করা হয়েছে। এই সমস্যা বেশি দিন থাকবে বলে মনে হয় না।'

হোটেল ভাড়া বিষয়ে তিনি বলেন, 'এখানে হোটেলগুলোর জন্য কোনো গাইডলাইন আছে—এমনটা আমার জানা নেই। কিছু নরমাল হোটেল আছে, যারা সুযোগ পেলেই বেশি ভাড়া নেয়। অনেক সময় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পর্যটক আসলে হোটেল ও যানবাহনে চাপ বেড়ে যাওয়ায় ভাড়া বেড়ে যায়।'

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কক্সবাজারে অনেক উন্নয়ন কাজ চলছে। যে কারণে বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আবর্জনা একটু বেশি চোখে পড়ছে।'

পর্যটন খাত নিয়ে কী ধরনের পরিকল্পনা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আপাতত পর্যটন খাত নিয়ে উপজেলা পরিষদের সমন্বিত কোনো পরিকল্পনা নেই।'

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের আগে যে পরিকল্পনা ছিল সেগুলো আবারো সুসংগঠিত করা হচ্ছে। কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলার বিষয়গুলো সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এগোচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রত্যেক রেস্টুরেন্টে খাবারের তালিকা আছে। তবে হোটেলের ভাড়া তেমনভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। আর এটা করা সম্ভবও না। কারণ এখানে বিভিন্ন ধরনের হোটেল আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

‘No Helmet, No Fuel' goes nationwide

The police headquarters has directed all field-level police officers to implement the “No Helmet, No Fuel” policy to prevent road accidents

1h ago