করোনায় বেকার হালিমকে পথ দেখালো মাশরুম

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনে চাকরি করছিলেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্দিয়াল গ্রামের আব্দুল হালিম। ২০২০ সালের শুরুর দিকে করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাতে চাকরি হারান তিনি।
এ পরিস্থিতিতে শুরুর দিকে কয়েকজনকে নিয়ে একটি ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেও তা পারেননি হালিম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধর্না দিয়েও জোটেনি কোনো কাজ। হতাশার এক পর্যায়ে তিনি বন্ধুদের পরামর্শে মাশরুম চাষে মন দেন।
প্রথম দিকে এই কাজে বাড়ির কারও কাছ থেকে উৎসাহ পাননি হালিম। তা সত্ত্বেও সাভারের মাশরুম উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ২০২০ সালের মাঝামাঝি ৫০টি স্পন (বীজ) প্যাকেট নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন।
স্বল্প পুঁজি নিয়ে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে সফলতা আসার পর ঋণ নিয়ে হালিম গড়ে তোলেন মাশরুমের বাণিজ্যিক খামার। এভাবে ২ বছরেরও কম সময়ে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কয়েকজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগও তিনি তৈরি করেছেন। এখন তিনি এলাকার অনেকের অনুপ্রেরণা।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে হালিম বলেন, 'চাকরি হারিয়ে চরম হতাশার সময়ে মাশরুম চাষের প্রস্তাব তুললে পরিবারের কেউ আগ্রহ দেখায়নি। কারণ আমাদের এলাকায় মাশরুম চাষের তেমন প্রচলন নেই'।

তিনি জানান, শুরুতে বসত বাড়ির ছোট একটি জায়গায় মাশরুম চাষ শুরু করার পর তিনি বুঝতে পারেন এর থেকে ভালো আয় আসা সম্ভব। পরে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিক খামার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন তিনি।
বর্তমানে বাড়ির আঙ্গিনাসহ মোট ৩৩ শতাংশ জায়গায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ করছেন হালিম। বর্তমানে তার খামারে প্রায় দেড় হাজার মাশরুমের স্পন (বীজ) প্যাকেট আছে। মাতৃগাছ আছে প্রায় হাজারখানেক।
হালিম জানান, তার প্রথম স্পন (বীজ) প্যাকেট থেকে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ফলন আসে। একটি স্পন প্যাকেট থেকে প্রায় ২ কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। সে হিসেবে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ কেজি মাশরুম বিক্রি করেন তিনি। প্রতি কেজি কাচাঁ মাশরুম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও শুকনো মাশরুম ১ হাজার ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
তবে লাভের পরিমান বেশি হলেও মাশরুম উৎপাদন একটি পরিশ্রমসাধ্য কাজ বলে জানান হালিম। বলেন, 'মাশরুম এক ধরনের ফার্নজাতীয় গাছ। এর নিয়মিত যত্ন আর পরিচর্যা না নিলে অন্য ক্ষতিকারক ফার্ন জন্ম নেয়। ফলে স্পন নষ্ট হয়ে যায়। তাই সবসময় সতর্ক থাকতে হয়'।

এই উদ্যোক্তার ভাষ্য, দেশের প্রচলিত ফসলগুলোর মতো মাশরুম বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাটা এখনো গড়ে ওঠেনি। তাই তিনি তার উৎপাদিত মাশরুম বেসরকারি সংস্থা আশার মাধ্যমে বাজারজাত করেন।
মাশরুম চাষকে একটি লাভজনক ব্যবসা অভিহিত করে আশার কৃষি প্রশিক্ষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, 'মাশরুম খুবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি সবজি। কঠোর পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে মাত্র ২ বছরেই হালিম মাশরুম চাষ করে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের উপযোগী। মাশরুম চাষের জন্য কোন উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। বসত ঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করেই প্রচুর মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব'।
এই কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য, হালিমের মাশরুম খামার এখন এলাকার বেকার যুবকদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। কৃষি বিভাগ সবসময় এ ধরনের উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করে আসছে বলে জানান তিনি।
Comments