কাগজের ফুল বানিয়ে চলে তাদের সংসার

বিগত ৩০ বছর ধরে কাগজের ফুল বানিয়ে বিক্রি করছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভোলারচওড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম (৫৪)। একই কাজে সম্পৃক্ত তার তিন ছেলে ও স্ত্রীও। পরিবারের সবাই এখন কাগজের ফুল বানায়। এ কাজের মাধ্যমে তার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।
শফিকুলের কাছে কাগজের ফুল বানানো শিখেছেন একই গ্রামের আরও ২০ জন। তারাও কাগজের ফুল বানিয়েই চালাচ্ছেন সংসার।
কাগজের ফুল তৈরির কারিগররা জানান, তারা কাগজ দিয়ে বিভিন্ন আকার ও রঙের বাহারি ফুল তৈরি করে থাকেন। তাদের তৈরি ফুল রাজধানী ঢাকার চকবাজারে পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের খুচরা বিক্রেতারা কিনে তা বিক্রি করে থাকেন। বিশেষ করে বিভিন্ন মেলায় কাগজের ফুল প্রচুর বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া, শহরের বিপণি বিতানেও কাগজের ফুল বিক্রি হয়ে থাকে। বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে কাগজের ফুলের ব্যবহার বেড়ে গেছে।
শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে প্রতিটি কাগজের ফুল তৈরি করতে ৯ থেকে ১০ টাকা খরচ হয় এবং তা পাইকারি বিক্রি হয় ১১ থেকে ১২ টাকায়। একজন কারিগর প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০টি কাগজের ফুল তৈরি করতে পারেন। আমরা কাগজের ফুল তৈরি করে সরাসরি পাইকারের কাছে বিক্রি করে দেই।'
'আমি দীর্ঘদিন কাগজের ফুল বানিয়ে সংসার চালাচ্ছি। আমার পরিবারের সবাই এখন কাগজের ফুল বানানোর কারিগর হয়েছে। কাগজের ফুল বানিয়ে আমার পরিবার প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করছে', বলেন তিনি।
একই গ্রামের কাগজ ফুলের কারিগর মারুফ ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৪ বছরে কাগজের ফুল তৈরি করছি। প্রতি মাসে গড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করি। বর্তমানে কাগজ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ায় আয় কিছুটা কম হচ্ছে। আমি নিজেও মাঝেমাঝে কাগজের ফুল খুচরা বিক্রি করি।'
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর গ্রামের কাগজ ফুলের কারিগর মিতালি রানী দাস (৪৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাগজের ফুল তৈরি করে গেল ২০ বছর ধরে সংসার চালাচ্ছি। আমার পরিবারের ৬ জনের সবাই কাগজের ফুল তৈরি করে থাকে। কাগজের ফুল তৈরি করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছি। ৪ বিঘা আবাদি জমিও কিনেছি।'

'আমরা প্রতি মাসে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার পিস কাগজের ফুল তৈরি করে পাইকারের কাছে বিক্রি করি। পাইকারিভাবে প্রতিটি কাগজের ফুল ১১ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করলেও তা খুচরা বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকায়', যোগ করেন তিনি।
রাজধানীর চকবাজার এলাকার কাগজের ফুলের পাইকার আকবর হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাগজের তৈরি ফুলের সরবরাহ পাওয়া গেলে রংপুর বেশি পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে কাগজের ফুল কেনেন। কাগজের ফুল তৈরি করে দেশের বিপুল সংখ্যক পরিবার সংসারে সচ্ছলতা এনেছে। এই ব্যবসার সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িয়ে গেছেন।'
কুড়িগ্রাম শহরে কাগজের ফুল বিক্রেতা সহির আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিটি কাগজের ফুল পাইকারের কাছ থেকে ১৪ থেকে ১৫ টাকা দরে কিনে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। মাঝেমাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাগজের ফুল সরবরাহের অর্ডারও পাই। কাগজের ফুলের সঙ্গে আমার সংসার মিশে গেছে গেল ১৫ বছর ধরে।'
লালমনিরহাট ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপক এহেছানুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাগজের ফুল তৈরিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কাজের সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। তাদেরকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা করা হয়। এ ছাড়াও তাদের পেশাকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করতে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধাও দেওয়া হয়।'
'কাগজের ফুল তৈরি একটি লাভজনক কর্ম। এ পেশার সঙ্গে এখন অনেক মানুষ জড়িয়ে গেছেন এবং আরও অনেকে এ পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন', যোগ করেন তিনি।
Comments