কুড়িগ্রামে একই স্কুলের ৮৫ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা গ্রামের বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ছবি: এস দিলীপ রায়

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪৫ জন ছাত্রীর মধ্যে ৮৫ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আগে এই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন শিক্ষিার্থীদের উপস্থিতির হার ৮০-৯০ শতাংশ। কিন্তু, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৪০-৪৫ শতাংশে।

বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান খন্দকার দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান খন্দকার বলেন, 'বিদ্যালয় খোলার পর উপস্থিতি কম হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেন শিক্ষকরা। এ পর্যন্ত ৮৫ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে পারিনি। তারা পড়ালেখা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে পরিবার তাদের বাল্যবিয়ে দিয়েছে।'

'শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে আমরা কাজ করছি,' যোগ করেন তিনি।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক সুজিত চন্দ্র রায় বলেন, 'এসব বাল্যবিয়ে গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা গোপনে ছাত্রীদের অন্য জায়গায় নিয়ে লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। যেন স্থানীয়রা বিষয়টি জানতে ও বুঝতে না পারে। বিয়ের কাজীর নাম বা কোথায় বিয়ে দেওয়া হয়েছে সেসব তথ্য দিতে চাচ্ছেন না অভিভাবকরা।'

বিদ্যালয়টির ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছে, 'আমার বাবা-মা আমাকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু, আমি রাজি না হওয়ায় তা হয়নি।'

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, বাল্যবিয়ের শিকার ৮৫ জন ছাত্রীর মধ্যে- ষষ্ঠ শ্রেণির ২ জন, সপ্তম শ্রেণির ১০ জন, অষ্টম শ্রেণির ১৭ জন, নবম শ্রেণির ২৯ জন, দশম শ্রেণির ১৪ জন এবং এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৩ জন।

ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত তথ্য হাতে পেয়েছি। পুরো উপজেলায় ৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ের বিষয়ে শুনেছি। বাল্যবিয়ে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতেও কাজ করা হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Aid allocation to be trimmed in next budget

The plan comes as $42.85b foreign funds remained unused at start of current FY

14h ago