কৃষকের আগ্রহ সবজি চাষে

ছবি: স্টার

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চরগরগরি গ্রামের কৃষক মো. নাসির উদ্দিন কয়েক বছর আগে সখের বশে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ শুরু করেছিলেন। এরপর তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করে সফল হন।

ছবি: স্টার

ধান-পাটের বদলে তিনি এখন তার বাড়ির পুরো জমির পাশাপাশি ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে সবজির আবাদ করছেন।

এ বছর ৩ বিঘা জমিতে তিনি বেগুন, কপি ও পেঁয়াজ চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমি থেকে তার ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

ছবি: স্টার

সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় পাবনার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ করছেন কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, আলু ছাড়া অধিকাংশ মৌসুমি সবজিই এখন পাবনায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আবাদ হচ্ছে। দেশে সবজির চাহিদা পূরণে জেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায় এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সবজি আবাদ সম্প্রসারিত হয়েছে।

অধিদপ্তরের হিসাবে জেলার ৯টি উপজেলায় এ বছর ৩৫ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। গ্রীষ্ম ও শীতকালীন মিলিয়ে এ বছর সবজি উৎপাদনের হার ৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। জেলায় উৎপাদিত সবজির মাধ্যমে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যি হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, মোট উৎপাদিত সবজির বেশির ভাগই শীতকালীন সবজি। জেলার ৯টি উপজেলার ২২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া, ১২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন-শীতকালীন সবজি আবাদ করে ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. আব্দুল লতিফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ঈশ্বরদী, পাবনা সদর এবং আটঘরিয়া উপজেলায় সর্বাধিক সবজির আবাদ হয়।

উৎপাদিত সবজি পাবনার বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সবজি আবাদ করে এ বছর জেলায় প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় বেশির ভাগ কৃষক এখন মৌসুমি সবজি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে সবজি থেকে বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জন হচ্ছে ফলে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, ১ বিঘা জমিতে ধান বা পাট আবাদ করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেশি লাভ করা যায় না কিন্তু ১ বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার বেশি লাভ করা সম্ভব। যে কারণে সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

কৃষক নাসির জানান, ১ বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করে ৫০ হাজার টাকার বেশি বেগুন বিক্রি করা যাচ্ছে। আর ফুলকপি আবাদ করলে প্রায় ৮০ হাজার টাকার ফসল পাওয়া যায়। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং সবজি চাষের জন্য উপযুক্ত জমি হওয়ায় এ বছর সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে।

ফলন ভালো হলেও বাজারজাতকরণ নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের আড়তদার ও ফরিয়াদের ওপর নির্ভর করতে হয়।

চরগরগরি গ্রামের কৃষক বাদশা মালিথা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গতকাল চরগরগরি আলহাজ মোর সবজির পাইকারি বাজারে পাইকারদের কাছে ২৫ টাকা কেজি দরে ফুলকপি বিক্রি করেছি। কিন্তু পাবনার বাজারে বা আশেপাশের খুচরা বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারণে কৃষক সঠিক দাম পাচ্ছে না।

ঈশ্বরদী উপজেলার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত সবজি চাষি শাজাহান আলী বাদশা ডেইলি স্টারকে বলেন, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারে না। তাদের প্রথমে গ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হয়। এখানকার পাইকাররা যত কমে সম্ভব কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে বড় বড় পাইকারদের কাছে বিক্রি করছে। পাইকারদের কাছ থেকে কিনছে সেখানকার ব্যবসায়ীরা। এভাবে কয়েক পর্যায়ে ঘুরে গ্রাহকের কাছে সবজি পৌঁছায়। যে কারণে সবজির দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণ হয়ে যায়। অথচ কৃষক তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়।

চরগরগরি পাইকারি বাজারের আড়তদার মনিরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে সেটা অন্যান্য বাজারে পাঠাতে বিশাল অংকের পরিবহন খরচ হয়। ১ ট্রাক সবজি ঢাকা বা চট্টগ্রামে পাঠাতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ট্রাক

ভাড়া দিতে হয়। সবজির ভরা মৌসুমে পরিবহন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়। ট্রাকের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সবজির দাম বেড়ে যায়।

উৎপাদক ও ভোক্তা পর্যায়ে দামের বিস্তর ফারাক নিয়ন্ত্রণ করতে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন স্থানীয় সবজি উৎপাদনকারীরা।

Comments

The Daily Star  | English
IMF World Bank Spring Meetings 2025

IMF-World Bank meetings end with little tariff clarity, but economic foreboding

Many participants in the Spring Meetings had a sense that Trump's admin was still conflicted in its demands from trading partners

54m ago