টমেটোর ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক

গত বছর উৎপাদিত টমেটো বিক্রি করে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ না পাওয়ায় অধিকাংশ কৃষক জমিতেই তা নষ্ট করেছিলেন। কিন্তু, এ বছর উৎপাদিত টমেটো উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে পেরে খুশি তারা।
গতবারের টমেটো চাষের ক্ষতি পুষিয়েও লাভবান হচ্ছেন কৃষক। উৎপাদিত টমেটো বিক্রি করতে তাদের বাজারে যেতে হচ্ছে না। সবজি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের বাড়ি থেকে টমেটো কিনছেন। এ বছর টমেটো বিক্রিতে লাভবান হচ্ছেন তারাও।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর বৃহত্তর রংপুরের ৮ জেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। তবে গত বছর টমেটো আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। সে বছর টমেটো চাষে লোকসান হওয়ায় অনেক কৃষক এ বছর টমেটো চাষ করেননি।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করতে খরচ হয় ১৮-২০ হাজার টাকা এবং টমেটো উৎপাদিত হয় ১২০-১৫০ মণ।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বড়ুয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ২০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। প্রতিমণ ৭০০ টাকা দরে ৭০ মণ টমেটো বিক্রি করেছি। জমি থেকে আরও ১৮-২০ মণ টমেটো পেতে পারি।'
'এ বছর টমেটো আবাদ করে অপ্রত্যাশিত লাভ করার পাশাপাশি গেল বছরের লোকসান পুষিয়ে নিয়েছি,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গতবার ২৭ হাজার টাকা খরচ করে ৪০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছিলাম। প্রথমদিকে মাত্র ৩ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছিলাম। পরে শ্রমিক-পরিবহন খরচ না হওয়ায় ক্ষেতেই টমেটো নষ্ট করেছি।'
একই এলাকার টমেটো উৎপাদনকারী কৃষক আব্দুল কাদের (৪৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর প্রতিমণ টমেটো বিক্রি করেছিলাম ৬০-৭০ টাকা দরে। এ বছর তা বিক্রি করেছি ৭০০-৮০০ টাকা মণ দরে। গত বছর লোকসান হওয়ায় এবার ১০০ শতাংশ জমির পরিবর্তে ৪০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছি।'
'গত বছর টমেটো চাষ করে ৪৫ হাজার লোকসান করেছিলাম। এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে উৎপাদিত টমেটো ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। টমেটো চাষে খরচ হয়েছে ২৮ হাজার টাকা।'
'এ বছর টমেটো উৎপাদন করে লাভবান হবো তা বুঝতে পারলে আরও বেশি জমিতে আবাদ করতাম,' যোগ করেন তিনি।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার গ্রামের কৃষক নরেন্দ্র নাথ রায় (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ৩ বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করেছি। ২ বিঘা থেকে ২৬৫ মণ টমেটো পেয়েছি এবং তা মণ প্রতি ৭২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। সবজি ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে টমেটো কিনে নিচ্ছেন।'
'গত বছর বাজারে নিয়ে গিয়েও টমেটো বিক্রি করতে পারিনি। এ বছর টমেটো চাষ করে আমরা অপ্রত্যাশিত লাভ করেছি।'
কুড়িগ্রাম শহরে পৌর বাজারে সবজি ব্যবসায়ী মোখলেছার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর টমেটোর সরবরাহ ছিল বেশি, কিন্তু চাহিদা ছিল কম। কৃষকরা বাজারে টমেটো নিয়ে এসেও বিক্রি করতে পারেননি। এ বছর আমরা তাদের ক্ষেতে গিয়ে টমেটো কিনছি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এখান থেকে টমেটো ঢাকাসহ নানা জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। গত বছর টমেটো ব্যবসায় আমরাও লোকসান করেছিলাম। এ বছর আশানুরূপ মুনাফা করতে পারছি।'
ঢাকা থেকে আসা সবজি ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শতাধিক সবজি ব্যবসায়ী ঢাকা থেকে এসে রংপুরের বিভিন্নস্থান থেকে টমেটো কিনছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর টমেটোর সরবরাহ কিছুটা কম। আমরা স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ীদের কাছে টমেটো কিনে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছি।'
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের তুলনায় এবার কম পরিমাণ জমিতে টমেটো চাষ হলেও এ বছর কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন। টমেটোসহ অন্যান্য সবজি চাষে কৃষকরা এ বছর বেশ লাভবান হয়েছেন। বর্তমান বাজারদর কৃষকদের শাক-সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে।'
Comments