ফলন ভালো হলেও সুপারির দামে হতাশ কৃষক

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে এ বছর সুপারির ফলন ভালো। তবে স্থানীয়বাজারে অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি হচ্ছে সুপারি। 
গতবারের তুলনায় এ বছর সুপারির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের কৃষকেরা। ছবিটি সম্প্রতি লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুরাকুটি হাট থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে এ বছর সুপারির ফলন ভালো। তবে স্থানীয়বাজারে অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি হচ্ছে সুপারি। 

গেল বছরের তুলনায় প্রতিটি সুপারি গাছে ২৫-৩০ শতাংশ ফলন বেশি হয়েছে জানান কৃষকেরা। স্থানীয় বাজারে সুপারির সরবরাহও বেড়েছে অনেক। কিন্তু গেল বছরের তুলনায় এ বছর সুপারি ৬০-৬৫ শতাংশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে। 

কৃষকেরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গেল বছর তারা বড় সাইজের এক পোন (৮০টি) সুপারি ৫৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেন কিন্তু এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা দরে। মাঝারি সাইজের এক পোন সুপারি বিক্রি হয়েছিল ৪০০-৪৫০ টাকা দরে কিন্তু এবছর তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৫০ টাকা দরে আর ছোট সাইজের এক পোন সুপারি বিক্রি হয়েছিল ২৮০-৩০০ টাকা দরে কিন্তু এবছর তা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা দরে।

কৃষকরা বলেন, প্রত্যেক কৃষকের বসতভিটার চারপাশে কমপক্ষে ২০-১০০টি সুপারি গাছ রয়েছে। অনেকে ২০০-২০০০টি সুপারি গাছ দিয়ে বাগান করেছেন। প্রত্যেক গাছ থেকে ৩-৭ পোন সুপারি পেয়ে থাকেন তারা।  

কৃষি বিভাগ সুত্র জানায়, রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও রংপুরে প্রায় ৫০ লাখ সুপারি গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে প্রতিবছর প্রায় দুইশ কোটি সুপারির ফলন পাওয়া যায়। এ অঞ্চলে পান-সুপারির চাহিদা ব্যাপক। 

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা গ্রামের কৃষক অনিল চন্দ্র রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, তার ৫০০টি সুপারি গাছের একটি বাগান রয়েছে। গেল বছরের তুলনায় এবছর ভালো ফলন পেয়েছেন। ফলনে তিনি বেশ খুশি হয়েছেন কিন্তু বাজারে সুপারির দাম কম হওয়ায় তিনি হতাশ। গেল বছরের বাগানের সুপারি বিক্রি করেছিলেন প্রায় ৮ লাখ টাকার। এবছর বাগানের সুপারি সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা পযর্ন্ত বিক্রি করতে পারবেন। 

'সুপারি বাগান করতে তেমন খরচ হয় না। শুধু ফলন আসার সময় সুপারি গাছে পরিচর্যা নিতে হয়। সুপারি বাগানে সম্বন্বিত ফসল হলুদ, আদাসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করে থাকি,' বলেন তিনি। 

লালমনিরহাট সদর উপজেলার সিন্দুরমতি গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, তার বাড়ির চারপাশে ৮০টি সুপারি গাছ রয়েছে। এসব গাছের প্রত্যেকটিতে এ বছর ৪-৫ পোন সুপারির ফলন পেয়েছেন। গেল বছর উৎপাদন পেয়েছিলেন ৩-৪ পোন ফলন। এবছর ফলন ভালো হলেও সুপারির দাম খুবই কম।

'এবছর সুপারির দাম এত কম হবে এটা ভাবতেই পারিনি,' তিনি বলেন। 

'সংসারে সুপারির চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর সুপারি বিক্রি করে ৬০-৬৫ হাজার টাকা আয় করতে পারতাম,' তিনি বলেন। 

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় সুপারি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, এবছর বাজারে সুপারির সরবরাহ অনেক বেশি। গেল বছরের সুপারি এখনো তাদের স্টকে রয়েছে। তাই সুপারি কিনতে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তারা। 

'আমরা কৃষকদের কাছ থেকে সুপারি কিনে বিশেষ পদ্ধতিতে মাটির গর্তে এসব সংরক্ষণ করে থাকি। পরে তা আস্তে আস্তে খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে থাকি,' তিনি বলেন।

'আমাদের অঞ্চল থেকে সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়ে তাকে,'তিনি বলেন।

সুপারির দাম আরও কমতে পারে বলে মনে করেন তিনি। 

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, গেল বছরের চেয়ে এ বছর এ অঞ্চলে ৩০ শতাংশ বেশি সুপারির ফলন হয়েছে।সুপারি হলো এ অঞ্চলের কৃষকদের বাড়তি আয়ের একটি ফসল। বসতভিটার চারদিকে, পরিত্যক্ত জমিতে, রাস্তার দু'ধারে সুপারি গাছ লাগিয়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। গেল কয়েকবছর ধরে অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে সুপারি উৎপাদন করছেন। সুপারি গাছ লাগানোর ৬-৭ বছর পরই কৃষকরা ফলন পেতে শুরু করেন। একটি সুপারিগাছ ১৫-২০ বছর ফলন দিয়ে থাকে।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

59m ago