রংপুরে তামাকের পরিবর্তে সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক

রংপুরে প্রতি বছর সূর্যমুখী চাষের এলাকা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কৃষকরা লাভ ও স্বাস্থ্য সুবিধার কথা বিবেচনা করে তামাক চাষ ছেড়ে তেলবীজ ফসল সূর্যমুখী চাষকে বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ২০১৮ সালে রংপুরে অল্প জমিতে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়েছিল। কয়েক বছরের মধ্যে তা বহুগুণ বেড়ে যায়।
এ বছর রংপুরের ৮টি উপজেলায় অন্তত ১৪০ হেক্টর জমি সূর্যমুখী চাষের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
রংপুরে তিস্তা অববাহিকায়, বিশেষ করে গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলায় কৃষকরা এ ফসল উৎপাদন করায় সূর্যমুখী চাষে সম্ভাবনা দেখছেন জেলার কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

রংপুরের জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুরের সব উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে। তবে তারাগঞ্জে এর পরিমাণ অনেক বেশি। সেই সঙ্গে জেলার অন্যান্য উপজেলার কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।'
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৫ কৃষক তামাক চাষ ছেড়ে এ বছর তিস্তা অববাহিকায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন।
স্থানীয় কৃষকরা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, গঙ্গাচড়ায় মধ্যবয়সী কৃষক আনু মিয়া তামাক ও অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ভুট্টা, সরিষা ও শীতকালীন সবজি চাষ করে আসছিলেন। তবে গত বছর তিনি তামাক চাষ করেননি।
তারা আরও জানান, মহিপুর গ্রামে তিস্তার বালুমাটিতে তার ৫ শতক জমিতে আনু মিয়া প্রথমে তামাকের পরিবর্তে সূর্যমুখী চাষ করেন। ফলন ভালো হওয়ায় তার লাভ হয়েছিল, যা এলাকার অন্যান্য কৃষকদের আকৃষ্ট করে।
আনু মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লাভ ভালো হওয়ায় আমি এ বছর আরও বেশি পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি।'
'এ বছর ১৭ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি' উল্লেখ করে আনু মিয়া আরও বলেন, 'সূর্যমুখী চাষে কম শ্রম ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় কৃষি উপকরণ খরচ অনেক কম। এ ছাড়া বাজারে সূর্যমুখী বীজের চাহিদা বেশি। ভোজ্যতেলের পাশাপাশি এটি পাখির খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।'
'অন্য দিকে, তামাক চাষে অনেক পরিশ্রম। কৃষকদের দিনের বেশিরভাগ সময় তামাক খেতে কাটাতে হয়। প্রায়শই তাদের শরীরে ব্যথা বাড়ায়। অধিকন্তু, তামাক চাষিদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা সাধারণ ব্যাপার। তাদের মধ্যে মাথাব্যথা ও ক্লান্তির সমস্যা দেখা যায়,' যোগ করেন তিনি।
তিস্তা অববাহিকার অনেক কৃষক এ বছর আনুকে অনুসরণ করছেন।
উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চর এলাকার ৫ কৃষক তাদের জমিতে তামাকের পরিবর্তে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তারা ভালো লাভেরও আশা করছেন।
সম্প্রতি, গঙ্গাচড়ায় তিস্তা অববাহিকা ঘুরে দেখা গেছে—শাহীন হোসেন, মমিনুল ইসলাম, নুর হোসেন, লিটন মিয়া ও বিলকিস বেগম তিস্তার শুকনো বালুমাটিতে সূর্যমুখী চাষ করছেন। তাদের প্রত্যেকেই এ বছর ১৫ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন।
শাহীন হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা তামাক উৎপাদন করতাম। কিন্তু, এ বছর সূর্যমুখী চাষ করছি।'
বিলকিস বেগম বলেন, 'ভালো লাভের আশা করছি।'
তারা জানান, সব মিলে এই ১৫ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
রংপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুল রহমান মণ্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় গত কয়েক বছরে দেশে সূর্যমুখী বীজ থেকে তৈরি ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উৎসাহিত করছে।'
তিনি আরও বলেন, ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর সূর্যমুখী বপনের সর্বোত্তম সময়। প্রায় ১২০ দিনের মধ্যে ফসল উঠানো যায় বলে তিনি জানান।
উপ-পরিচালক আরও জানান, তিনি ঢাকায় সূর্যমুখী ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা রংপুরসহ আশপাশের জেলার কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদিত বীজ কিনতে রাজি হয়েছেন।
গত বছর কৃষকরা উৎপাদিত ফসল বিক্রি করেছিলেন প্রতি কিলোগ্রাম ৭০ টাকা দরে। তারা আশা করছেন, এ বছর একই দাম পাবেন।
উপ-পরিচালক জানান রংপুরে তামাক চাষের এলাকা কমছে কারণ এলাকার কৃষকরা নানা কারণে তামাক চাষে আগ্রহী নয়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৮-০৯ সালে রংপুরে তামাক চাষের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭০৭ হেক্টর। এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৫৫ হেক্টরে।
রংপুর ছাড়াও নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলার কৃষকরাও তাদের জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
Comments