১ টাকায় শসা কিনে ২০ টাকায় বিক্রি
রমজান মাসে শসার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও নায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন দিনাজপুরের কৃষকরা। গত কয়েকদিনে দাম কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে ১ টাকা থেকে দেড় টাকায় প্রতি কেজি শসা কিনছেন। কয়েক হাত ঘুরে সেই শসা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৮ থেকে ২০ টাকায়।
আজ রোববার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে দিনাজপুরের কয়েকটি উপজেলার কৃষকরা জানান, এপ্রিলের শুরুতে বাজারে শসার দাম ভালো থাকলেও গত সপ্তাহের শেষ দিকে দাম কমতে শুরু করেছে। রমজানের শুরুতে কৃষকরা পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করলেও ১০ দিন আগে থেকে দাম কমছে। গত ৩ দিন ধরে পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি ১ টাকা থেকে দেড় টাকায় শসা বিক্রি করছেন তারা।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে অনেক কৃষক এ বছর বিস্তীর্ণ জমিতে শসা চাষ করেছেন। প্রতিদিন এলাকার চাষীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য রাঙ্গালীপাড়া গ্রামের পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে।
আজ রোববার সকালেও ফসল তোলার পর অনেক কৃষক প্লাস্টিকের ব্যাগে শসা নিয়ে এলেও ক্রেতা প্রায় নেই বললেই চলে।
এই এলাকার কৃষক মো. ফরিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাইকাররা আমাদের কাছে প্রতি কেজি ১ টাকা দাম হাঁকাচ্ছে।'
ফরিদুল আরও বলেন, 'এ বছর এক বিঘা জমিতে শসা চাষে খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। আমি আশা করছিলাম ভালো লাভ পাবো কারণ রমজান মাসে শসার চাহিদা ভালো থাকে। কিন্তু এখন লাভ তো দূরে থাক, উল্টো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছি।'
ইতোমধ্যেই তার প্রায় ২৩ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানান তিনি।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গালীপাড়া গ্রামের নুর ইসলাম বলেন, 'এ বছর আমি ২৫ শতক জমিতে শসা চাষ করেছি। পুঁজি কম থাকায় আমি এই বছর কোনো শ্রমিক নিইনি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গত ৪ মাস ধরে চাষ করেছি। সারা মৌসুমে নিজেই কঠোর শ্রম দিয়েছি।'
'তবে শেষ পর্যন্ত আমি এখনও লোকসান গুনছি। অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও কিছু টাকা রোজগার করতে পারতাম,' বলেন তিনি।
রাঙালীপাড়া গ্রামের আরেক কৃষক শাকিল আহমেদ বলেন, 'কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য পাইকারদের কাছে বাকিতে বিক্রি করছেন। পাইকার তার নির্ধারিত আরতদারের কাছে বিক্রি করার পর কৃষকের টাকা পরিশোধ করছে।'
জানতে চাইলে পাইকারি ব্যবসায়ী নুর আলম বলেন, 'বাজারে চাহিদা না থাকায় শসার দাম নেই বললেই চলে। এছাড়া বাজারে শসার ব্যাপক সরবরাহ রয়েছে।'
তিনি আজ ৩ টাকা কেজি দরে শসা কিনেছেন বলে দাবি করেন।
এদিকে দিনাজপুর শহরের রেলবাজার হাট ঘুরে দেখা গেছে ১ কেজি দেশি জাতের শসা ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দিনাজপুরের বাহাদুরবাজারের আরেক পাইকারি বিক্রেতা আশিকুল ইসলাম জানান, 'আমি ১ কেজি শসা বিক্রি করেছি ৮ টাকায়, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়।'
দিনাজপুরের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বরাবরের মত রমজান মাসে দেশে শসার চাহিদা বেশি থাকায় এই জেলার কৃষকরা গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি জমিতে শসা চাষ করেছে। তবে হঠাৎ করে বাজারে শসার চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং একইসঙ্গে সরররাহ বেশি হওয়ায় শসার দাম ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা মো. আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর বীরগঞ্জ উপজেলায় ২৪৫ হেক্টর জমিতে শসা চাষ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫ শতাংশ জমির ফসল কাটা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'ক্রমহ্রাসমান বাজারের বিপরীতে বাজারে শসার সরবরাহ অনেক গুণ বেশি হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে কৃষকদের মুনাফা মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে চলে যাচ্ছে।'
Comments